ইলুমিনাতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কিছু নিয়মনীতি পৃথিবীতে প্রনয়ন করা। ইলুমিনাতি শব্দটি প্রথম শোনা যায় ১৫ শতকের দিকে। সেসময় বিশেষ কিছু গোষ্ঠীর মানুষ যারা ইলুমিনাতি দিসেবে প্রকাশ পেত, তারা নিজেদের অস্বাভাবিকতায় আলোকিত বলে দাবি করত। মূলত ইলুমিনাতি নামটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ইলুমিনাতাস থেকে। ইলুমিনাতাস অর্থ আলোকিত। আর এই ল্যাটিন শব্দ ইলুমিনাতাস এর বহুবচন হচ্ছে ইলুমিনাতি। মূলত ইলুমিনাতি হচ্ছে সেসব মানুষের গুপ্ত সংগঠন যারা নিজেদের বিশেষ গোপন রহস্যময় জ্ঞানে আলোকিত বলে দাবি করে।
ইলুমিনাতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কিছু নিয়মনীতি পৃথিবীতে প্রনয়ন করা। আর এই নিয়ন্ত্রন যে কেবল কিছু ক্ষেত্রে তা নয়! আপনার সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সকল কাজেরই নিয়ন্ত্রন করাই তাদের গোপন এজেন্ডার অংশ বলে ধরে নিতে পারেন। আর তাদের আসল উদ্দেশ্য হল, সমস্ত পৃথিবীর মানুষ তাদের নিয়মনীতি অনুসরণ করবে এবং ধীরে ধীরে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়িত হবে। আর তাদের এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবার জন্য তারা পৃথিবীতে যত নিয়মকানুন আছে তা ছিন্নভিন্ন করে তাদের তৈরি মানবরচিত নিয়ম কানুন ছড়িয়ে দেয়। আর তাদের নিয়ম নীতি অনেক বেশি বাস্তব জগতমুখী এবং চাকচিক্য পূর্ণ হয় বলে মানুষ সেগুলো গ্রহনও করে ফেলে খুব সহজেই! পৃথিবীতে পরকিয়া, অবাধ যৌনাচার, আত্মহত্যা ইত্যাদির মতন কাজকে ছড়িয়ে দেয়া এবং বৈধতা প্রদান করাও ইলুমিনাতির গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ। এমনকি সুদ ভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রসার ঘটানোকেও ইলুমিনাতির গোপন কর্মকাণ্ডের অংশ ধরা হয়।
ইলুমিনাতির কিছু সাইন বা চিহ্ন রয়েছে। তার মধ্যে যারা ইলুমিনাতি হিসেবে টুকটাক জানেন, তারা পিরামিডের ভেতর এক চোখ সাইন বা চিহ্ন সম্পর্কে নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন। আর আপনি এটা জেনেও অবাক হয়েছেন বা হবেন যে, আমেরিকার এক ডলার নোটেও এই ইলুমিনাতি সাইনটি রয়েছে। ইসলামিক-তত্ত্ব মতে এই সাইনটি সাধারণত দাজ্জালের একচোখকে নির্দেশ করে। আর দাজ্জালের এই এক চোখকে মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয়াও ইলুমিনাতির এই সাইনের অন্যতম বড় একটি উদ্দেশ্য। ইলুমিনাতি তাদের এই সাইনের মাধ্যমে এই একচোখ সাইনকে এভাবে প্রকাশ করছে যে, এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়, আর মানুষের কাছে এই এক চোখকে খুবই স্বাভাবিক করে দেয়াই তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য!
আপনি হয়ত অবাক হবেন এটা ভেবে যে, বর্তমানে পৃথিবীর চলমান ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে যে পরিমান সুদ ছড়িয়ে পড়েছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যকোন সময়ই ছিল না! আর এই সুদকে মানুষের সাধারণ জীবনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে এগুলোকে স্বাভাবিক ভেবে নেয়ার মনোভাব তৈরি করে নেয়াকে ইলুমিনাতির অন্যতম বড় একটি এজেন্ডা বাস্তবায়ন হিসেবে ধরে নেয়া হয়।
Table of Contents
পর্দার আড়ালে ইলুমিনাতির কর্মকাণ্ড!
পৃথিবীর অন্যতম একটি ষড়যন্ত্রবাদি চিন্তাধারার মানুষদের সংগঠন হিসেবে ইলুমিনাতি অনেক বেশি জনপ্রিয়। আর ইলুমিনাতি যে মানুষের কাছে কিছু সময় হল পরিচিত তা কিন্তু নয়,ইলুমিনাতি নিয়ে কথা চলছে শত শত বছর ধরেই। ইলুমিনাতির ভেতরকার গোপন বড় বড় সদস্যদের অনেকে বলে ‘পাপেট মাস্টার’। পাপেট অর্থ পুতুল, যার মানে তারা বড় বড় শীর্ষ স্থানীয় সকল মানুষদের তাদের পুতুল বানিয়ে তাদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে নেয়। ইলুমিনাতির হাত সব জায়গায় বিস্তৃত। ইতিহাসে বহু বড় কার্যকলাপে গোপনে এই ইলুমিনাতি সংগঠনটির পুতুল খেলা দেখিয়েছে। ইলুমিনাতির গোপন কর্মকাণ্ডের পরিধি এত বড় যে, তারা বড় বড় নির্বাচন, বিপ্লব, বিজনেস মনোপলি, স্টক মার্কেট নিয়ন্ত্রন থেকে শুরু করে সকল খাতে নিজেদের গোপন রাজ বিরাজের প্রমান নানাভাবে দেখিয়েছে। সময়ে সময়ে অনেক গবেষণা প্রমান করেছে যে, ইলুমিনাতি নানা ভাবে, নানা সময়ে,নানাভাবে তাদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পর্দার পেছনে থেকে কাজ করেছে।
পৃথিবীর অনেক বড় বড় অনাখাঙ্খিত ঘটনাবলিকে ইলুমিনাতির সদস্যরা কখনো একটি স্বাভাবিক ঘটে যাওয়া ঘটনা হিসেবে দেখে না। বরং দেখা যাবে এসব ঘটনা ইলুমিনাতির প্ররোচনায় কোন না কোন ভাবে সাজানো হয়েছে বা হয়েছিল। সাজানো হয়েছিল কোন ব্যাক্তির, প্রতিষ্ঠানের- ব্যাক্তিগত/ প্রতিষ্ঠানগত সুবিধার জন্য।
সাধারণত ইলুমিনাতির কর্মকাণ্ডের গোপন এবং নথিগত প্রমান পাওয়া যায়না বলে, সবাই এগুলোকেও ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব কিংবা কল্পনাপ্রসূত চিন্তাভাবনা ভেবে গ্রহন করতে চায়না। আর স্বাভাবিক চিন্তাধারায় মানুষের ইলুমিনাতির অস্তিত্ব সম্পর্কে এড়িয়ে যাওয়া মনোভাবই তাদের(ইলুমিনাতি) আরো বেশি শক্তিসালি হয়ে,সকল ক্ষেত্রে তাদের বেশি প্রতিপত্তি বাড়িয়ে তুলতে সহযোগিতা করে। অনেক গবেষকরাও পৃথিবীর অনেক বড় বড় ঘটনার ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারেননা। অনেক বিষয়ই খুবই শক্ত পক্ত ব্যাখ্যার মধ্যে আনা যায়না। আর এসব ঘটনার পিছে ইলুমিনাতির গোপন হাত এতটাই শক্তিসালি যে বড় বড় এসব ঘটনাবলির আসল বিষয় সবার সামনে তুলে আনার সাহসও কারো হয়না। বিষয়গুলো ধাঁধার মধ্যেই থেকে যায়।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ৯-১১ এর সাজানো আক্রমনের ঘটনা দেখে মানুষ সত্যি খুবই অবাক হয়। এতো বড় একটি আক্রমন হয়ে গেলো অথচ আমেরিকার মত দেশের গোয়েন্দা এবং প্রতিরক্ষা বাহিনি আগে থেকে এর কোন হদিসই করতে পারলো না! ২০০৮ সালে আমেরিকার অর্থনৈতিক পতন এবং ব্যাংকিং খাতের ধসের মতো এত বড় একটি ঘটনা ঘটে যাবার পরেও, সরকার কি সুন্দর করে সকল কিছু থেকে বেঁচে থাকল এগুলো মানুষকে খুবই অবাক করে। অনেক বিষয় অবাক করে যে, বিশ্বব্যাপি কিভাবে টাকার দাম একদম কমে যাচ্ছে, একসময় যে টাকায় অনেক কিছু করা যেত, এখন সে পরিমান টাকার কোন দামই নেই! ধর্ষণ এবং খুনের মতন অপরাধের মানুষ কিভাবে কয়েক দিনের ভেতর জামিন পেয়ে অবাধে ঘরাফেরা করছে, অথচ চুরি বা নেশার মত ছোটো অপরাধ করেও মানুষ বছরের পর বছর জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেনা! এসকল অস্বাভাবিক বিষয় মানুষের কাছে স্বাভাবিক করে তোলা হচ্ছে, এটাও আরেকটি অবাক করার করার বিষয়। আর এসকল কিছুই ইলুমিনাতির কর্মকাণ্ডের অংশ।
আমরাও ইলুমিনাতির স্বীকার!
ইলুমিনাতির এজেন্ডার অন্যতম বড় একটি বিষয় হচ্ছে মানুষকে ইলুমিনাতির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন না রাখা। আর এর জন্য অন্যতম বড় একটি হাতিয়ার হচ্ছে মানুষকে অর্থহীন কার্যক্রমে ব্যস্ত রাখা! আপনি বা আমি হয়ত নিজেও তাদের এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ। মানুষ তার মন ঠিক রাখার জন্য ঘরে বসে তার টেলিভিশন এর পর্দায় পছন্দের সিরিজ কিংবা তার পছন্দের অনুষ্ঠান দেখেই তার অবসর সময় পার করিয়ে দেয়।
কোথায় কি হচ্ছে, কিভাবে তার অধিকার হরণ হচ্ছে না ভেবে যেন, মানুষের পছন্দের ক্রিকেট দলের স্কোর কত হল সেটা জানাই যেন বড় বিষয়। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে টেলিভিশন সেটের সামনে খেলা দেখে বা শো দেখে সময় পার করাই যেন আসল কাজ। এভাবে মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সময়কে অর্থহীন করে দেয়াই এই ইলুমিনাতির অন্যতম এজেন্ডার অংশ! আর ইলুমিনাতি তাদের এই এজেন্ডাতেই সফল।
আমরা এখন যে পৃথিবীতে বসবাস করছি, তা যে কতটা নিপুণভাবে ইলুমিনাতি এর মতো গুপ্ত সংগঠনএর এজেন্ডা দিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য! আমরা অভ্যাসগত ভাবে কোন বিষয়গুলোর দিকে অতি মাত্রায় ঝুঁকে যাচ্ছি, আমাদের দৈনন্দিন আসলে কোন বিষয়গুলোকে অত্যাবশ্যকীয় করা হয়েছে আর সেগুলো আসলেই কতটা যুক্তিযুক্ত এসবে পরিপূর্ণ এক ধাঁধার অবস্থাই, এই২১ শতাব্দীর জীবনযাপন। যে সংবাদটি আসলেই গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রচার করা উচিত সেটা পত্রিকার মাঝের পাতায় কোন ছোটো অংশে ছাপানো হচ্ছে। অন্যদিকে কোন নায়িকার কার সাথে সংসার ভেঙ্গেছে, কিংবা কোন দল কত স্কোর করেছে তা দিয়ে যেন সব ভরা! আর জীবনটা এমন দিকে গড়ানো হচ্ছে যেন, এসব নিয়ে যে মানুষ না থাকতে পারে, সে এই বর্তমান পৃথিবীতে খাপ খাওয়াতে পারবে না। আর অবাক করার বিষয় কি এটা নয়, এগুলো কেনো হচ্ছে?
ইলুমিনাতির মত গুপ্তসংগঠনএর নেটওয়ার্ক এতোটা শক্তিশালী এবং প্রভাবিত যে, একজন সাধারণ মানুষ যদি এসব গুপ্ত সংগঠন এরব্যাপার তাদের এজেন্ডা সম্পর্কে মানুষের মাঝে কথা বলতে চায়, সে অবশ্যম্ভাবীক ভাবেই বাধার সম্মুখিন হবে। ইলুমিনাতির সদস্য পদ, ইলুমিনাতির লক্ষ্য এবং অর্জন, ইলুমিনাতির গুপ্তসংগঠন হিসেবে ব্যাপক বিস্তার ইত্যাদি। এসব বিষয় নিয়ে যখন কেউ কথা বলবে, তখন সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে যায় নির্ভুলভাবে সেগুলোকে প্রমান করতে না পারা! কেননা মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এসব নিয়ে কখনই কথা বলেনা। সামগ্রিকভাবে ইলুমিনাতির মতো গুপ্তসংগঠন এর সম্পর্কে সঠিক গ্নজ্ঞান নির্ভরশীল বড় বড় প্লাটফর্মে প্রকাশ করা হয়না। এখানে ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক যে, এখানে প্রকাশ করা হয়না ব্যাপারটা হবে, প্রকাশ করতে দেয়া হয়না! আর এখানেই সাধারণ মানুষের সাথে ইলুমিনাতির মতো গুপ্ত সংগঠনের অনেক বড় একটি গ্যাপ!
বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ মানুষ সময়ের সাথে গা ভাসিয়ে দেবার মতো মন-মানসিকতার বলে, কেউ যদি ইলুমিনাতির সাথে যুক্ত এমন কারো সিক্রেট বা গোপন এজেন্ডা সম্পর্কে কথা বলে, তাদের কথাও মানুষ হাসি বা ঠাট্টা বলে উড়িয়ে দেয়।
প্রি-ইলুমিনাতি সংগঠন
ইলুমিনাতির উৎপত্তি ইলুমিনাতি থেকেই নয়। ইলুমিনাতির উৎপত্তির সাথে সম্পর্ক রয়েছে দি নাইটস টেমপ্লার এবং ফ্রিমেসনস এর মতন গুপ্ত সংগঠনের। মূলত ইলুমিনাতির বীজটি ধারাবাহিকভাবে বপন হয়েছে বহু কালক্রমে। প্রথম দি নাইটস টেমপ্লারদের থেকে, তার পর ফ্রিমেসন অতঃপর বেভারিয়ান ইলুমিনাতি, পরিশেষে আজকের ইলুমিনাতি।
বেভারিয়ান ইলুমিনাতি প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল সর্বপ্রথম জার্মানিতে ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে। বেভারিয়ান ইলুমিনাতির আগে ফ্রি-মেসনস এবং নাইট টেমপ্লারও ছিল প্রায় একই ধারার গুপ্ত সংগঠন। ১১ শতকের দিকে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল নাইটস টেমপ্লার এবং ফ্রিমেসনারি ছিল ১৫ শতকের সময়কার। ইলুমিনাতির আগেও এসব গুপ্ত সংগঠনে গোপন বিদ্যা চর্চার প্রচলন ছিল। তবে পরবর্তীতে আস্তে আস্তে এগুলো বৃদ্ধি পেতে পেতে এসব সংগঠন আরো বেশি অত্যাধুনিক গুপ্তসংগঠনে পরিণত হয়।
আজকের আধুনিক সভ্যতাই বলুন কিংবা হাজার বছর আগের প্রাচীন কোন সভ্যতা, মূলত জ্ঞানই ছিল মূল শক্তি। প্রাচীন মিসরীয় এবং গ্রিস সভ্যতায় তারা জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এমন সকল কাজ করে রেখে গিয়েছে! যা আজও মানুষকে বিস্মিত করে। ততকালিন মিসরীয় এবং গ্রিক সভ্যতাতেও রহস্যময় কিছু জ্ঞানের চর্চা করা হত। দিনে দিনে বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান, চিকিৎসা, ঔষধ, শিল্প আরো যত বিকশিত হচ্ছে, নতুন নতুন আবিষ্কারগুলোও অনেক বেশি হচ্ছে, এসব রহস্যময় জ্ঞান যে আরো বেশি সর্বাধুনিক হচ্ছে এগুলো তারই প্রমান! আর এই সকল গুপ্ত-সংগঠনগুলো যে সর্বদাই জ্ঞানের দিক দিয়ে সমাজের উজ্জ্বল মানুষদের নিয়ে গঠিত তারই প্রমান দিচ্ছে।
মূলত পূর্ববর্তী গুপ্ত সংগঠনের ধারা হিসেবে, ইলুমিনাতির মতন গুপ্ত সংগঠনে তারা মানুষকে বিভিন্ন গোপন আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পর্কে শিক্ষা দান করে। ইলুমিনাতিতে তাদের সদস্যদের বিভিন্ন রহস্যময় এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান তাদের অত্যাবশ্যকীয় রীতি-নিতি হিসেবে শিক্ষাদান করানো হয়। তাদের শেখানোর পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে এসব আধ্যাত্মিকতাকে তাদের চর্চাও করানো হয়। প্রথমত তারা এসব সেখায় যেখানে তারা বোঝায় এখানে কোন অসৎ উদ্দেশ্য নেই বা কারো ক্ষতি করবার জন্য এসব এসব সেখানো হচ্ছে না! তবে এই শিক্ষাগুলো বিভিন্ন এজেন্ডা হাসিল করতে মানুষকে কিভাবে যে পরিচালিত করে, তা সম্পর্কে শুরুর দিকে চর্চা করা সেই সদস্যও হয়ত বুঝতে পারেনা। ইলুমিনাতিতে একজন সদস্য যোগদান করে তার নিজের সুবিধা অর্জনের জন্য। আর এসবের মোহে সে কিভাবে যে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, সে যে নিজে একটি গুপ্তসংগঠনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, সেই বিষয়টিই উপলব্ধি করতে পারেনা। তবে এই গুপ্তসংগঠন থেকে প্রাপ্ত তার জ্ঞান এবং কর্মকাণ্ডই খুবই জটিল কোন সমস্যার সৃষ্টি করে দেয়।
বলা হয় একজন সদস্যের চরিত্র এবং তার মন সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারনা পেলে, ঠিক যখন সেই লোকটির কাঙ্খিত লক্ষ্যে কিছুটা উন্নতির পর তার ভেতর ধিরে ধিরে অসৎ কাজের ভাব চলে আসে! ঠিক তখন, ইলুমিনাতি তাদের মনে প্রচন্ড স্বার্থপরতা বাড়িয়ে দেয়, এবং তার কাজে তাকে চরম ধ্বংসাত্মক বানিয়ে ফেলে।
ফ্রিমেসন এবং ইলুমিনাতি সম্পর্কিত অনেক বিশিষ্ট লেখকদের অনেক লেখা থেকে প্রমান পাওয়া যায় যে, দর্শনগত এবং ধর্মগত দিক দিয়ে ইলুমিনাতির উচ্চ পর্যায়ের সদস্যরা লুসিফারিজম এবং স্যাতানিজমের চর্চা করে। স্যাতানিজমকে বলা যায় শয়তানবাদ।
লুসিফারিজম বা শয়তানবাদ
আর লুসিফারিজম এবং স্যাতানিজমের পার্থক্য করবার ক্ষেত্রে আপনার দুটি বিষয়ের পার্থক্য সম্পর্কে জানতে হবে। আর এই দুটি বিষয় হচ্ছে আস্তিক শয়তানবাদ এবং নাস্তিক শয়তানবাদ। মূলত ১৯৬০ সালের পর প্রথম আস্তিক শয়তানবাদে প্রচলন করেছেন অ্যান্টন লাভে। এই অ্যান্টন লাভে ছিলেন চার্চ অব শয়তানের প্রতিষ্ঠাতা এবং শয়তানিক বাইবেলের লেখক। অ্যান্টন লাভে এবং তার অনুসারীরা দাবি করতেন যে তারা নাস্তিক এবং তারা আক্ষরিক অন্যান্য ধর্মে উল্লেখিত শয়তান বা খারাপ শক্তিকে বিশ্বাস করেনা। এমনকি তারা অন্যান্য ধর্মে উল্লেখিত সৃষ্টিকর্তাকেও বিশ্বাস করেনা। আর তারা তারা জিদের স্যাতানিস্ট হিসেবে দাবি করত এবং তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ করবার জন্য বিভিন্ন রকম সাইন-সিম্বল ব্যবহার করত।
অন্যদিকে আস্তিক স্যাতানিজম বা আস্তিক শয়তানবাদে তারা সৃষ্টিকর্তা, শয়তান এবং অতিপ্রাকৃত শক্তি সকল কিছুই বিশ্বাস করে। তবে আস্তিক শয়তানবাদে তারা শয়তান এবং সৃষ্টিকর্তার অবস্থানই পুরোটা ভিন্ন করে দিয়েছে। আর আস্তিক শয়তানবাদ বা লুসিফারিজমে তারা আদম এবং হাওয়া আঃ এর জান্নাতে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার ঘটনাকে ভিন্নভাবে বিশ্বাস এবং চর্চা করে।
পবিত্র কোরআন এর সূরা বাকারাহ এর ৩৫ নম্বর এবং ৩৬ নম্বর আয়াতে উল্লেখ্য আছে যে,
আর আমরা বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং সেখানে তোমাদের যা মন চায় তৃপ্তিসহকারে খাও; তবে এই গাছটির কাছে যেও না, তাহলে তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
অতঃপর শয়তান তাদের উভয়কে সরিয়ে দিল এবং তারা যেখানে অবস্থান করচিত সেখান থেকে তাদের বের করে দিল; আর আমরা বললাম- তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অপরের শত্রু; আর পৃথিবীতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের জন্য রয়েছে আবাস ও ভোগের বস্তু।
মূলত এই আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি যে, আদম এবং হাওয়া আঃ জান্নাতে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে নিষিদ্ধ ফল খাবার কারনে, সৃষ্টিকর্তা তাদের উপর রাগান্বিত হয়ে তাদেরকে পৃথিবীতে প্রেরন করেছিলেন। আর লুসিফারিজম বা আস্তিক শয়তানিজমে এই বিষয়টিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়। লুসিফারিজমে বলা হয়, নিষিদ্ধ ফলটি ছিল জ্ঞানের ফল। আর আদম এবং হাওয়া আঃ কে সেই নিষিদ্ধ ফল খাওয়া থেকে সৃষ্টিকর্তা তাদের বিরত থাকতে বলেছেন। যেন, তাদের সেই ফল খেয়ে চোখ খুলে না যায়! আর লুসিফারিজমে বলা হয় সৃষ্টিকর্তা আদম এবং হাওয়া আঃ কে জান্নাতে দাসের মতো করে রেখেছিলেন।
আর যখন ফল খাওয়ায়র দোষে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হল, তখন শয়তান যাকে তারা লুসিফার বলছে, সে গিয়ে আদম এবং হাওয়া আঃ কে উদ্ধার করে নিয়ে পৃথিবীতে নিয়ে আসে। আর শয়তানের তথা লুসিফারের কারনেই তারা এতো জ্ঞান প্রাপ্ত হয়। আর এভাবে লুসিফারিজম তথা আস্তিক শয়তানবাদ তত্ত্বে সৃষ্টিকর্তার বিপরীতে শয়তানকেই নায়ক বানিয়ে তারা শয়তানের উপাসনা করে থাকে।
আর এই লুসিফারিজম থেকেই ইলুমিনাতির অন্যতম ভিত্তিবাক্য হচ্ছে জ্ঞানই শক্তি। আর অবশ্যই এই জ্ঞান হচ্ছে তাদের ভেতরকার রহস্যময় জ্ঞান। ইলুমিনাতিতে জ্ঞানের আলোকেই নতুন কোন সদস্য থেকে উচ্চতর সদস্যে ইলুমিনাতি সদস্যদের পদায়ন করা হয়। তাদের ভেতরকার এসব রহস্যময় জ্ঞান ব্যবহার করে তারা সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি সাধন করে। আর ইলুমিনাতি তাদের সদস্যদের মধ্যে এই তত্ত্ব প্রচার করে যে, এসব রহস্যময় জ্ঞানই তাদেরকে ঈশ্বরের মতো প্রজ্ঞাবান করে তুলবে!
ইলুমিনাতির শক্তির উৎস
পৃথিবীতে ইলুমিনাতির এতো পরাক্রমশীল শক্তির অন্যতম উৎস হচ্ছে আধুনিক পৃথিবীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন। বেশিরভাগ মানুষেরই আধুনিক টাকা এবং এই অর্থনীতি সম্পর্কে মৌলিক ধারনা নেই। কিভাবে টাকা তৈরি হচ্ছে, কিভাবে টাকার মূল্যমান ঠিক করা হচ্ছে এবং সমাজে কিভাবে এই টাকার ফাংশন ঠিকভাবে কাজ করছে, এসকল বিষয় নিয়ে ধারনা নেই। আধুনিক পৃথিবীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এতটাই বেশি জটিল যে, মানুষ এই জটিল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানবার চেষ্টাই করে থাকেনা।
ইলুমিনাতির এতো শক্তির অন্যতম কারন হচ্ছে যে। পৃথিবীর অর্থনীতি এবং টাকা ব্যবস্থাপনায় তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রন। ইলুমিনাতির কমিউনিটি এতটাই শক্তিশালী যে তারা যেকোনো মানুষ থেকে সরকার সকলকে যেকোনো পরিমানে টাকা লোন তথা ঋণ দেয়ার ক্ষমতা রাখে। তাদের তত্ত্ব খুবই সাধারণ , যেকোনো সরকার কিংবা খুবই উচ্চস্থানীয় কোন মানুষকে তাদের যেকোনো দরকারে ঋণ দিয়ে তাদের থেকে অতিরিক্ত সুদের মাধ্যমে সেই ঋণের অর্থ তুলে নেয়া। আর এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপি একটি সুদ অর্থনীতির সামরাজ্য বিস্তার করা। আপনি যদি আগের সময়ে বা বর্তমান সময়েও কিছু ক্ষেত্রে তাকান; তবে মুনাফা করতে বা অর্থ লাভ করতে কিকরতে হয়? কোন একটি পণ্য বা সেবা তৈরি- প্রস্তুত করতে হয়। কেউ যদি সেই পণ্য বা সেবা আপনার থেকে গ্রহন করে সেখান থেকে অর্থের বিনিময়ে তা দিয়ে আপনার লাভ হয়। এই জন্য আপনার নিজের পরিশ্রম করতে হয়, খাটতে হয়, হয়ত জমিতে দিনের পর দিন কাজ করতে হয়, রান্না করতে হয়, নতুন নতুন জিনিস তৈরি করতে হয় ইত্যাদি কাজ করতে হয়। পরিশেষে আপনার পণ্য বা সেবা বিক্রয় হলে আপনার পরিশ্রমের জন্যেও একটি অর্থ আসে এবং আপনি সেই পরিশ্রমের বিনিময়ে লাভবান হন।
তবে ইলুমিনাতি এমন একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে যে, সেখানে পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতাই তাদের হাতে। আপনি হয়ত এখন কষ্টের বিনিময়েঅর্থ পেয়ে লাভবান হচ্ছেন, তবে পুরো অর্থ ব্যবস্থাটাই তাদের হাতে তাদের কোনকষ্টই বা কোন কাজই করতে হচ্ছেনা! তাদের প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমে আপনা আপনিই তাদের অর্থ প্রাপ্তি হচ্ছে। আর তাদের এই প্রতিষ্ঠিত এই সিস্টেম হচ্ছে আজকের দিনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
যখন মানবসভ্যতা বিকশিত হচ্ছিল তখনকার সময়ে আজকের মতো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিলনা। তখন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল বিনিময় কেন্দ্রিক। কেউ যদি তার জমিতে ভুট্টার চাষ করত সেই সেই ভুট্টার শস্যদানা বিক্রি করত। সেই শস্যদানা অন্য কোন কৃষক কিনত নিজের জন্য কিংবা তার গরুর জন্য। সেসব কৃষকের যদি নিজের জন্য কাপড় লাগতো, তখনও তারা তাদের প্রয়োজনীয় কাপড়ের বিনিময় করত পর্যাপ্ত পরিমানে শস্যদানা দিয়ে। আর এই পদ্ধতির নাম ছিল বার্টার সিস্টেম। তবে এই বার্টার সিস্টেমে কিছু সমস্যা ছিল। যেমন, কেউ যদি অতিরিক্ত পরিমানে ভুট্টা দানা আবাদ করে সেই ভুট্টা দানা বিনিময়ের জন্য কোন গরুর খামারির কাছে যায় আর সেই গরুর বা যার কাছে বিনিময় করবে তার ভুট্টা দানা না লাগে তখন সেই অতিরিক্ত শস্য অবিক্রিত হিসেবে থেকে যেত। এখন যেই ক্রেতা তার থেকে ভুট্টা দানা কিন্ত তার দরকার গমের দানা, এখন ভুট্টা দানা তো আর গমের দানার সাথে পরিবর্তন করা যাবেনা। এই থেকে বার্টার সিস্টেমের সমস্যা শুরু হয়েছিল।
বার্টার পদ্ধতি থেকে আধুনিক অর্থ ব্যবস্থা!
আর বার্টার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা থেকে তৎকালীন সভ্যতার মানুষ একটি মিডিয়াম অফ এক্সচেঞ্জ তৈরির জন্য রাজি হয়েছিল। আর সেই থেকে শুরুর দিকে স্বর্ণমুদ্রা ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়েছিল। এখানে আগেযেখানে যেখানে দেয়া নেয়ার মাধ্যমে বিনিময় করা হত, সেখানে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেব মুদ্রার প্রচলন শুরু হল। কেবল স্বর্ণমুদ্রাই নয়, তামা এবং রূপার মুদ্রাও ব্যবহার শুরু হয়েছিল। এমন সব ধাতু ব্যবহার শুরু হয়েছিল, যা ততবেশি সহজলভ্য ছিলনা এবং চাইলেও তৈরি করা যেত না। আর হাজার হাজার বছর ধরে ইতিহাসে এই মুদ্রা ব্যবস্থাই অর্থনীতির মূল বিনিময় মাধ্যম ছিল।
তবে একটা সময় এই কয়েন বা মুদ্রা বহন করাও সমস্যার হয়ে গেলো। মুদ্রা বহন করা এবং এগুলো সংরক্ষণ করাও অনেক কষ্টসাধ্য এবং ঝামেলাপূর্ণ ছিল। তো এই সমস্যা থেকে উদ্ধার পেতে ব্যাংকিং ব্যবস্থার শুরুর দিকে এই সকল মুদ্রা ব্যাংককে জমা করবার বিনিময়ে ব্যাংক নোট বা কাগজি মুদ্রা প্রণয়নের ব্যবস্থা শুরু হল। যেখানে যে পরিমান স্বর্ণ কিংবা রৌপ্য ব্যাংকে জমা করা হবে, তার বিনিময়ে সেই সংখ্যক ব্যাংক নোট তাকে প্রনয়ন করা হবে। আর যেকোনো সময় মানুষ ব্যাংকে সেই নোট ফেরত দিলে সেই পরিমান স্বর্ণ কিংবা রৌপ্য ফেরতও পেতে পারবে। আর এই কারনে স্বর্ণমুদ্রা কিংবা রৌপ্যমুদ্রার পরিবর্তে মানুষ ব্যাংক থেকে ইস্যু করা সেসব নোট ব্যবহার করে বাণিজ্য তথা লেনদেন করতে পারবে। আর এভাবে কাগজি টাকা বা মূলত ব্যাংক থেকে প্রণীত একটি রিসিপের ব্যবস্থা থেকেই কাগজি মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়।
আর কাগজি মুদ্রার প্রচলনের পর থেকে ব্যাংক আরেকটি ব্যবস্থা শুরু করে সেটি হচ্ছে যাদের ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত পরিমানে স্বর্ণমুদ্রা বা রৌপ্যমুদ্রা জমা নেই, তাদেরও তো অতিরিক্ত অর্থ বা টাকা লাগতে পারে! তো ব্যাংক তাদেরকে অতিরিক্ত পরিমানে ব্যাংক নোট ধার বা ঋণ দেয়া শুরু করে। ব্যাংক এখানে ব্যাংকে স্বর্ণ বা রৌপ্য জমা না থাকার বিনিময়েই তাদের ইস্যুকৃত নোট ধার দিয়ে আরো অতিরিক্ত পরিমানে ব্যাংক নোট কিংবা স্বর্ণ বা রৌপ্য নেয়। আর এভাবে শুরু আধুনিক সুদ ভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রচলন। ব্যাংক এখানে কোনরকম কষ্ট ছাড়াই কেবল তাদের সিস্টেমের মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করতে সক্ষম হচ্ছিল। আর এই সিস্টেমের বীজও বপন হয়েছে ইলুমিনাতি থেকে। কেননা এরকম ব্যাংকিং ব্যবস্থার জ্ঞানের উৎপত্তি হয়েছিল এই গুপ্তসংগঠনটি থেকেই।
ইলুমিনাতির প্রচলিত আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ব্যাংক কেবল তাদের রিসিপ ইস্যু করে দিয়ে যাদের তা দরকার তাদের সেটি দিয়ে দিচ্ছে, আর বিনিময়ে তার চাইতে বেশি পরিমানে অর্থ আদায় করে নিয়ে বসে বসে অ্যায় করছে। এখানে ব্যাংক যে পরিমান ঋণ দিচ্ছে তার বিনিময়ে সেই ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমানে স্বর্ণ কিংবা রৌপ্য রয়েছে কিনা, সেই বিষয়টি সমতা করার বালাই থাকছে না এখানে! অথচ যেখানে ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত প্রতিটি নোট কিংবা রিসিপের বিনিময়ে সমপরিমান অর্থের স্বর্ণ কিংবা রৌপ্য জমা থাকার কথা ছিল। আর ঠিক এভাবেই আজকের অর্থনীতি চলমান রয়েছে একটি অবাস্তব সিস্টেমের অপর ভিত্তি করে! আর মূলত এই অবাস্তবঅর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে ইলুমিনাতি যেখানে ইচ্ছা টাকার মূল্যমান বাড়াচ্ছে বা কমাচ্ছে, আর দিন দিন টাকার মূল্য কমছে।
ইলুমিনাতির চিন্তাধারা
বাস্তবিকভাবে ইসলাম, খ্রিস্ট, বৌদ্ধ এমনকি হিন্দু সকল ধর্ম একটি নীতিতে এক যে, সত্যের পথে চলতে হবে। পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত সকল ধর্মই মানুষকে ভালো এবং মন্দর পার্থক্য বেছে নিয়ে সত্যের পথে চলতে নির্দেশ করে এবং এই আদর্শগত দিক থেকে সবাই একই। তবে ইলুমিনাতি এই আদর্শে চলতে বিশ্বাসী নয়! আর জীবনের এই আদর্শগত দিককে বিশ্বাস করতে ইলুমিনাতির গুপ্ত সদস্যরা ঐচ্ছিক নয়। কারো পক্ষে কেমন আচরন বা করনীয় করা উচিত তার বদলে তারা মানব অনুসরনিয় প্রতিটি নৈতিক আদর্শকেই এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। মিথ্যা না বলা, চুরি না করা, হত্যা না করা, লোভে না পরা এই নীতিগুলো ইলুমিনাতির সদস্যদের কাছে কোন মানে রাখে না। আর এটাই ইলুমিনাতিদের অন্যের অর্থ, সম্পদ, স্বাধীনতা এবং মানসিক সুস্থতা কেড়ে নিয়ে চলবার অন্যতম যুক্তি।
আর এসকল বিষয় থেকে একটি প্রশ্ন কিন্তু মাথায় আসে যে, ইলুমিনাতির সদস্যরা পরকালে বিশ্বাস করে কিনা? বা তারা কি মৃত্যুর পরে যে সৃষ্টি কর্তার কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে, সে বিষয়ে বিশ্বাস করে কিনা? আর বিষয়ে মূলত দুটি ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রথমত, ইলুমিনাতির সদস্যরা পরকালের জীবনে বিশ্বাস রাখে না। তারা এই ক্ষেত্রে এটিও বিশ্বাস করে যে, তারা অন্যসকল প্রানির মতন সাধারণ প্রানি যাদের কোন আত্মা নেই। আর তারা যখন মারা যাবে তার পরে কোন জীবন থাকবে না এবং কোন বিচার আচারও হবেনা। দ্বিতীয়ত, আবার অনেকে মৃত্যুর পরের জগতকে বিশ্বাস করলেও, তারা ভাবে তারা যে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেনা, সেই ঈশ্বর তাদের বিচারও করবে না।
এই পর্যায়ে এসে আরেকটি প্রশ্নের জন্ম দেয়, সেটা হচ্ছে ইলুমিনাতিরা কি আসলেই সঠিক? মানুষ কি আসলেই আত্মাবিহিন প্রানি যাদের মৃত্যুর পরে কোন জীবন নেই? আর যেসকল মানুষ ধর্মের চর্চা করছে সেগুলো কি সত্যিই মিথ্যে? যুক্তির খাতিরে ধরে নিন মৃত্যুর পরে কোন জীবন নেই এবং আর সৃষ্টিকর্তার কোন প্রশ্নেরও সম্মুখীন হতে হবেনা মৃত্যুর পরে! যদিও এটি মিথ্যা, তবে তাদের দর্শনই যদি সত্যি হয় তবে ভেবে দেখুন তো আজকের সমাজটা কতটা ভয়াবহ একটি অবস্থায় রূপান্তরিত হবে! সমাজের সকল কিছু অপূর্ণ এবং অর্থহীনতায় ভরে যাবে। আর সকল মানুষ এমন এক জন্তুতে পরিণত হবে যারা নৈতিকতার তোয়াক্কা করবে না। আর এই পৃথিবীটা পরিণত হবে একটি নরকে!
You're reading eProjonmo, the versatile technology news portal of bd.