কোডিং করতে কি খুব ভালো ল্যাপটপ দরকার?

যারা প্রোগ্রামিং শুরু করতে চান বা যারা ঠিক করেছেন যে, আইটি সেক্টরে কাজ করবেন বা শিক্ষা অর্জন করবেন, শুরু দিকে তাদের সবার ভেতরই একটি কমন চিন্তা দেখা যায়। আর সেই কমন চিন্তাটি হচ্ছে যে, আমার কি আসলেই একটি ভালো ল্যাপটপ দরকার? আজকের লেখাটি মূলত কোডারদের জন্য যারা কোডিং নিয়ে নিজেদের পথচলা শুরু করতে চান, তবে সন্ধিহান হয়ে থাকেন এই ভেবে তাদের কেমন ল্যাপটপ দরকার এই ভেবে!

মূলত আমাদের দেশের পরিসিস্থিতে ৭০% মানুষ যারা নিজেদের আইটি সেক্টরে কাজ করে নিজেদের সামলম্বী দেখতে চায়। এসকল মানুষ এমন অর্থনৈতিক অবস্থায় থাকে যে, তাদের পক্ষে একটি নতুন ল্যাপটপ কেনা অত সহজ হয়না। এই জন্যই এমন প্রশ্ন অনেক বেশি ওঠে যে, প্রোগ্রামিং বা কোডিং এর জন্য কি খুব ভালো ল্যাপটপ প্রয়োজন হয় কিনা! তো আমাদের লেখাটি আরো বেশি আগানোর আগেই এই বিষয়টি জেনে রাখুন যে, না! আপনার কোডিং কিংবা প্রোগ্রামিং এর জন্য আহামরি খুব ভালো ল্যাপটপের প্রয়োজন নেই।

আপনার কাছে একটি সাধারন ল্যাপটপ যেটিতে ডিসপ্লে আছে, কিবোর্ড আছে, টাচপ্যাড আছে আপনি সেটি দিয়েই আপনার প্রোগ্রামিং এর যাত্রা শুরু করতে পারবেন।

কোডিং বা প্রোগ্রামিং টা এমন বিষয় যে, আপনার কাছে কিছু না থাকলেও, মানে ল্যাপটপ না থাকলেও আপনি শুরু করতে পারবেন! অবাক হলেন? এই কথাটা এই জন্য বলা! কারন, অনেকে বলে যে তাদের কাছে ভালো একটি ল্যাপটপ নেই বলে তারা কোডিং বা প্রোগ্রামিং শুরুই করতে পাচ্ছেন না। তাদের জন্য অজানা একটি বিষয় হতে পারে যে, আপনি আপনার এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনেও কোডিং করতে পারবেন। হ্যা, আপনি চাইলে উইন্ডোজের ভিএস কোডের মত, আপনার এন্ড্রয়েড ফোনে ‘টারমাক্স’ নামক একটি অ্যাপ ব্যবহার করে সম্পূর্ণভাবে একি কাজ করতে পারবেন।

যদিও এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনে কোডিং মোটেও আপনার কাছে ইউজার ফ্রেন্ডলি মনে হবেনা… । তবে ঐযে, আমার ল্যাপটপের জন্য কোডিং বা প্রোগ্রামিং করা হচ্ছেনা, এই ওজুহাতের জায়গা তো থাকলো না, তাইনা বলুন?

কোডিং বা প্রোগ্রামিং এর শুরুতে আপনি কি কি ভাষা শিখবেন? সি, সি++, পাইথন, জাভা এগুলোই তো নাকি? আপনি অনায়াসে যেকোনো বেসিক পেন্টিয়াম প্রসেসর যুক্ত ল্যাপটপেও এই কাজগুলো করতে পারবেন! আপনি যদি ১০-২০ হাজার টাকায় কোন সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপও কেনেন সেটা দিয়েও আপনি আপনার প্রোগ্রামিং এর যাত্রা শুরু করতে পারবেন।

প্রোগ্রামিং এর সাথে কিন্তু আবার এডিটিং, গেমিং এর ব্যাপারগুলো জড়িয়ে ফেলবেন না। ধরুন যে, আপনি প্রোগ্রামিং, স্পেসিফিকভাবে একটা উদাহরণ যে’ ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করবেন। এখন যদি আপনি আপনার ল্যাপটপে গ্রাফিক্স কার্ডের চিন্তা করেন তাহলে কিন্তু ভুল হবে! কারন গ্রাফিক্স কার্ড আপনার ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। তবে এডিটিং, গেমিং করতে গেলে হয়ত আপনার গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন হতে পারে।

আমাদের দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা এমন যে, কেউ চাইলেই সেই মুহূর্তেই কোন ভালো ল্যাপটপ কেনার সামর্থ্য আসলে থাকেনা! তো এমন সময় কি করবেন? আপনি গেমিং, ভিডিও এডিটিং এমনকি গ্রাফিক্স ডিজাইনের কথাও বাদ দিন! আপনি কোডিং করবেন, তবে এমন অবস্থা যে আগামি ১-২-৩ বছরেও হয়ত আপনার ভালো ল্যাপটপ কেনা হয়ে উঠবেনা… । এই সময় কি আপনি বসে থাকবেন? মোটেও না! আপনি অবশ্যই আপনার যে সামর্থ্য আছে সেটা দিয়েই অন্তত একটি বেসিক মানের ল্যাপটপ কিনুন।

অনেকে হয়ত, এই বিষয়টি মাথায় নিতেই চায়না। তারা ভাবে আজ আমার কাছে বেসিক ল্যাপটপ থাকলে, যার কাছে আমার চেয়ে হাই-এন্ড ল্যাপটপ রয়েছে সে হয়ত আমার চেয়ে এগিয়ে যাবে। এটা একটা ছোট চিন্তাভাবনা! আপনি কতোটা প্রোগ্রামিং শিখছেন, আপনার কোডিং স্কিল কতটুকু তা মোটেও আপনার কি মানের ডিভাইস আছে সেটা নির্ণয় করে দিবেনা! তো এই চিন্তা থেকে দূরে থাকুন যে, বেসিক মানের ডিভাইস দিয়ে আপনি আপনার দক্ষতা কম অর্জন করবেন! বরং অনেক বেশি দামের ল্যাপটপ না কিনেও কেবল আপনার ব্রেনের পরিশ্রমের কারনে, আপনার সস্তা ল্যাপটপ দিয়েই আপনি অন্য কারো থেকে বেশি এগিয়ে যাবেন!

আপনি একটি বেসিক মানের ল্যাপটপ কিনেই সেটি দিয়েই পুরোদমে আপনার কাজ শুরু করুন। আপনি সি, পাইথন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, জাভা ইত্যাদি সকল প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত কাজ একটি বেসিক ল্যাপটপে আপনি অনায়াসেই করতে পারবেন। তবে এখানে একটি বিষয় আছে যে, মেশিন লার্নিং, ডীপ লার্নিং সম্পর্কিত অনেক কোড করতে মিনিমাম ৮ জিবি র‍্যাম এটা-সেটা আরো অনেক কিছু দরকার হয়! সেক্ষেত্রে কি করবেন? ধরে নিলাম আপনি আপনার বেসিক ল্যাপটপে প্রোগ্রামিং শিখতে শিখতে এমন পর্যায়ে চলে গেলেন যে, এপনি এআই সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়েও কাজ করছেন। তখন আপনি বিভিন্ন ভিপিএস প্লাটফর্মে ভিপিএস একাউন্ট খুলে সেখানে এসব কাজ করতে পারেন। ভিপিএস মানে হচ্ছে ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার। আপনার যদি ক্রেডিট কার্ড থাকে, তবে আপনি স্টুডেন্ট হিসেবে গুগল, এমাজনের মত লিডিং ক্লাউড প্লাটফর্মে নিজের ভিপিএস এনভায়রনমেন্ট তৈরি করে নিয়ে নিজের কাজ দিব্বি ফ্রিতে সেরে নিতে পারেন।

আমাদের দেশে খুব বেশি জনপ্রিয় না হলেও! বাইরের দেশের শিক্ষার্থীরা নিজেদের কাছে খুব হাই-এন্ড ডিভাইস না থাকলেও, ফ্রিতে বড় বড় কোম্পানির ক্লাউড এনভায়রনমেন্ট ব্যবহার করে তাদের মেশিন লার্নিং এর মত প্রোগ্রামিং এর কাজও করে থাকে!

বেসিক ল্যাপটপ কিনুন বা হাই-এন্ড ল্যাপটপ! ল্যাপটপ বরাবরই অন্যতম একটি ভালো বিনিয়োগ। আপনি একটি ল্যাপটপ কিনে যদি ৩-৪ বছরে অন্তত পক্ষে সেই ল্যাপটপের সমপরিমাণ অর্থ তুলে আনতে না পারে, তবে আপনাকে নেগেটিভ দিক দিয়ে অনেক বেশি ক্রিয়েটিভ বলতেই হয়! আপনি যখন আপনার কষ্টের অর্থ আপনার জন্য একটি ল্যাপটপ কেনার মাধ্যমে বিনিয়োগ করবেন, তখন আপনার ভেতর একটি জোশ থাকবে যে,আমাকে এই অর্থ এই ডিভাইসটি দিয়েই তুলে আনতে হবে। আর সেই জোশই আপনাকে আপনার ল্যাপটপ দিয়ে ভালো সফলতা অর্জন করতে সহযোগিতা করবে।

আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মূল মর্মার্থ বুঝতে পেরেছেন। ল্যাপটপ ভালো কিনুন বা মোটামোটি আপনার কোডিং সফলতা আসবে, কেবলমাত্র আপনার কাজের মাধ্যমে!

You're reading eProjonmo, the versatile technology news portal of bd.

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comments (1)