ইলন মাস্ক: সফল বহু কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ইলন মাস্ককে চিনি স্পেসএক্স এবং টেসলা মোটরসের জন্য। তবে ইলন মাস্ক কিন্তু আরেকটি জনপ্রিয় সেবার সহ প্রতিষ্ঠাতা। ইলন মাস্ক হচ্ছে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম পেপালের সহ প্রতিষ্ঠাতা। ইলন মাস্ক টেসলা মোটরসের অন্যতম বড় একজন ইনভেস্টর, আর বর্তমানে সেই কোম্পানিটির সিইও হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

ইলন মাস্ক ৯৫ সালে জনপ্রিয় একটি অনলাইন সার্ভিস জিপ২ কেও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জিপ২ ছিল একটি অনলাইন ডাইরেক্টরি ওয়েবসাইট। এখানে বিভিন্ন শহর ভিত্তিক যাবতীয় নানা তথ্য পাওয়া যেত।

ইলন মাস্ক ১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিন আফ্রিকায় জন্মগ্রহন করেছিলেন। তার বাবা দক্ষিন আফ্রিকান এবং মা হচ্ছেন কানাডিয়ান। খুবই ছোটো বয়স থেকেই ইলন মাস্ক তার মেধার পরিছয় দিয়ে আসছে। আর ছোটো থেকেই তার নিজের উদ্যোক্তাভাব এবং কম্পিউটার বিষয়ে ব্যাপক দখলের পরিচয় পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে, ইলন মাস্ক তার ১২ বছর বয়সেই একটি ভিডিও গেমস তৈরি করে সেটি একটি কম্পিউটার ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে দেয়।

১৯৮৮ সালে কানাডিয়ান পাসপোর্ট পেলে ইলন মাস্ক সেসময় দক্ষিন আফ্রিকা ছেড়ে দেন। ইলন মাস্ক এর এর আফ্রিকা ছাড়ার দুটি কারণ ছিল, প্রথমত বাইরের বিশ্বে তিনি অনেক বেশি সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত সেসময় দক্ষিন আফ্রিকায় কিছুদিন বাধ্যতামূলক দেশের সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হত, ইলন মাস্ক সেটি করতে চাচ্ছিলেন না।

শুরুতে ইলন মাস্ক অন্টারিওতে অবস্থিত কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তবে ১৯৯২ সালে ইলন মাস্ক পেন্সিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন এবং সেখান থেকেই তার স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পেন্সিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পদার্থবিজ্ঞান দুটি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছিলেন। এরপর তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য ভর্তি হন। তবে ভর্তি হবার দুইদিন পরেই তিনি স্ট্যানফোর্ড ছেড়ে দেন।

আমি মনে করি সাধারন মানুষের ক্ষেত্রে অসাধারণ হয়ে ওঠার চেষ্টা করা সম্ভব।

মূলত সেইসময়টা ইন্টারনেট এর প্রারম্ভিককাল ছিল, আর ইলন মাস্ক বুঝতে পেরেছিলেন এইসময়টা পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করবার চেয়ে, ইন্টারনেট নিয়ে কাজ করলে সমাজের অনেককিছু পরিবর্তন করা যাবে। ১৯৯৫ সালে তিনি জিপ২ প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন। যেখানে মূলত বিভিন্ন শহরের ম্যাপ থেকে শুরু করে নানারকম বিজনেস ডাইরেক্টরি পাওয়া যেত। আর মাস্ক তার এই জিপ২ এর মাধ্যমে এসব তথ্য তৎকালীন বিভিন্ন অনলাইন সংবাদপত্রগুলোর কাছে বিক্রি করতেন। পরবর্তীতে কম্পিউটার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘কম্প্যাক’ ৩০৭ মিলিয়ন ডলারে জিপ২ কিনে নেয়।

ইলন মাস্ক এবার একটি অনলাইন ফিন্যন্সিয়াল সার্ভিস এক্স ডট কম তৈরি করেন, পরবর্তীতে যেটির নাম দেন পেপাল। এই ফিন্যন্সিয়াল সার্ভিসটি অর্থ লেনদেনের জন্য খুব দারুনভাবে পারদর্শী ছিল। ২০০২ সালে একটি অনলাইন নিলামে ইকমার্স জায়ান্ট ইবে পেপালকে ১.৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়। পেপালে তিনি শুরু থেকেই নিজের পাশাপাশি অনেক দক্ষ কর্মী নিয়োগ করেছিলেন। ইলন মাস্ক বলতেন, কোন বড় কাজে অনেক সংখ্যক মানুষ নিয়োগ করা পুরোপুরি ভুল। সংখ্যা কখনই মেধার জায়গা পূরণ করতে পারেনা।

ইলন মাস্ক ভাবেন মানুষ হবে আন্তঃগ্রহ প্রানি, মানুষ পৃথিবীর গন্ডি পেরিয়ে পারি দিবে মহাবিশ্বএর নানাপ্রান্তে। ইলন মাস্কের আরেকটা আক্ষেপ ছিল তৎকালীন সময় রকেট বানানোর অনেক বেশি খরচ! আর এই আগ্রহ থেকে নিজ উদ্যোগে তার মত করে বিভিন্ন সমস্যা মেটাবার জন্য ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠা করেন, স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস তথা স্পেসএক্স। পেপাল থেকে চলে আসার পর ইলন মাস্ক ভেবেছিলেন মানব সভ্যতার আরো কি কি সমস্যা আছে। তিনি এটা ভাবেননি যে, অর্থ উপার্জনের আরো কি কি দিক আছে।

ইলন মাস্ক জানতেন ইলেকট্রিক কারের সম্ভাবনা সামনের সময়ে প্রচুর বাড়বে। আর পৃথিবীতে যেভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির খরচ হচ্ছে এসব ইঞ্জিন চালিত গাড়ির জন্য! তা যেমন পৃথিবীর ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসবে, তেমনি অচিরেই এর বিকল্প দরকার! আর সেই জায়গা থেকে পেপাল থেকে পাওয়া টাকার কিছু অংশ তিনি টেসলা মোটরসে ইনভেস্ট করেন। টেসলা মোটরস এর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন মারটিন এবারহার্ড এবং মার্ক তারপেনিং। আর ইলন মাস্কের আগমনে এই দুজন উদ্যোক্তার হাত আরো শক্ত হয়। টেসলা মোটরসে ইলন মাস্ক আসার পর টেসলা মোটরস থেকে এর নাম শুধু ‘টেসলা’ রাখা হয়।

ইলন মাস্ক বলেন, যে কাজটা করা তোমার জন্য অতি জরুরি, সেটির জন্য অবশ্যই চেষ্টা করা উচিৎ। এমনকি কাজটির সফলতার সম্ভাবনা শূন্য হওয়া সত্ত্বেও। তিনি আরো বলেন, যদি বিফলতা না আসে তবে বুঝবে, তুমি পর্যাপ্ত উদ্ভাবন করছ না। ইলন মাস্ক সর্বদা নিজের মন যা বলেছে, সেদিকেই কাজ করে গিয়েছেন। কোন বাধা বা কারো কথা তাকে বিচলিত করতে পারেনি। ইলন মাস্কের কথাতেই উঠে আসে, আমি সর্বদা সমালোচনা খুজে বেড়াই। তোমার কাজের জন্য একজন যুক্তিসম্পন্ন সমালোচক স্বর্ণালঙ্কারের মতন মূল্যবান।

খুব মন লাগিয়ে কাজ করুন। তার মানে আমি বলতে চাইছি যে, আপনি সপ্তাহে ৮০ থেকে ১০০ ঘন্টা কাজ করুন। বেশিরভাগ মানুষ সপ্তাহে ৪০ ঘন্টার মত কাজ করে। আপনি একি কাজ করুন তবে ১০০ ঘন্টা করুন। তারা যে সাফল্য পাবে ১ বছরে, আপনি তা পাবেন ৪ মাসে।

You're reading eProjonmo, the versatile technology news portal of bd.

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *