বর্তমানে ২ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন একটিভ ব্যবহারকারী নিয়ে ফেসবুক বর্তমানে পৃথিবীর সবচাইতে বড় সামাজিক মাধ্যম। আর সেই হিসেবে ফেসবুক হচ্ছে কোন কোম্পানির মার্কেটিং এবং মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যতম বড় একটি মাধ্যম! মার্কেটিং এর দিক দিয়ে ফেসবুকের গুরুত্ব অপরিসীম।
আপনি ফেসবুকের এই বিশাল জনসংখ্যাকে কিভাবে আপনার নিজের জন্য কাজে লাগাবেন? ফেসবুকের এই বিশাল ব্যবহারকারীদের মাঝে কিভাবে আপনার কোম্পানির প্রসার করবেন ? আর সেই জন্য আপনার দরকার ফেসবুক মার্কেটিং সম্পর্কে জানা। সঠিক ফেসবুক মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমে আপনি খুব সহজে আপনার ব্যবসা বা কোম্পানির প্রসার ঘটাতে পারবেন।
আপনি যদি নতুন হন তবে ফেসবুক মার্কেটিং আপনার কাছে কিছুটা ঘোলাটে লাগতে পারে। তবে আস্তে আস্তে জানতে জানতে আপনার কাছে ফেসবুক মার্কেটিং বিষয়টি খুবই ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আমারা আজকের এই লেখায় ফেসবুক মার্কেটিং এর অনেক বিষয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। আর আমরা ফেসবুকের টুল সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করব, যার মাধ্যমে আপনি ফেসবুক মার্কেটিং এর ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন।
Table of Contents
ফেসবুক মার্কেটিং কি?
ফেসবুক মার্কেটিং হচ্ছে বিশেষ ধরনের কিছু মার্কেটিং টেকনিক যার মাধ্যমে কোন ব্যবসাকে ফেসবুকে মানুষের মাঝে প্রচারনা করা হয়। ফেসবুক মার্কেটিং এর কয়েকটি প্রকারভেদ আছে। নিচে সেই প্রকারভেদ গুলো উল্লেখ করা হল,
- ফেসবুক এড
- বিজনেস পেজ
- ফেসবুক মার্কেটপ্লেস
- ফেসবুক গ্রুপ
এখানে আমরা উপরে ফেসবুক মার্কেটিং এর ৪টি ধরন উল্লেখ করলাম! এখানে এই প্রতিটি আলাদা আলাদা ধরনের জন্য আলাদা আলদা মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি রয়েছে। আপনি ফেসবুক এডস এর স্ট্র্যাটেজি দিয়ে দিয়ে কিন্তু ফেসবুক গ্রুপে মার্কেটিং করতে পারবেন না। আবার একইভাবে ফেসবুক গ্রুপের মার্কেটিং প্লান কিংবা স্ট্র্যাটেজি দিয়ে ফেসবুক বিজনেস পেজে মার্কেটিং করতে পারবেননা।
আপনি ফেসবুকে মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ফ্রি ভাবেও আপনার মার্কেটিং করতে পারবেন, আবার পেইড ভাবেও করতে পারবেন। এটা নির্ভর করে যে আপনি ঠিক কোন প্লানে আপনার মার্কেটিংটি করতে চাচ্ছেন।
কেন আপনিও ফেসবুক মার্কেটিং ব্যবহার করবেন?
বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৯০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি সরাসরি তাদের মার্কেটিং এর জন্য ফেসবুকের সাথে যুক্ত। আর দিনে প্রায় ২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ ফেসবুকে একটিভ থাকে। এদের মধ্যে ১৭ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন ফেসবুকে যুক্ত হয়ে কেবল কোননা কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা কোম্পানির সাথে যুক্ত হতে।
একই ভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত ভাবে ফেসবুকে তাদের এক্টিভিটি পরিচালনা করে যাচ্ছে নতুন নতুন কাস্টমার ধরার জন্য! তাই আপনি যদি আপনার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যেকোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা কোম্পানির প্রচারনা যদি ফেসবুকে ঠিকভাবে না করেন, তবে নিঃসন্দেহে এই সময় এসে আপনিও পিছিয়ে যাবেন।
আপনি জেনে আরো বেশি অবাক হবেন যে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারির প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ ফেসবুকে যুক্ত হয়; কেবল তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য খোঁজার উদ্দেশ্যে। আর এখানেই কোম্পানি এবং ব্র্যান্ডগুলো এসে তাদের নিজেদের পণ্যের প্রচারনা করে সেই উৎসুক কাস্টমারদের কাছে নিজেদের পণ্য বিক্রয় করে দেয়।
ফেসবুক এড
ফেসবুক মার্কেটিং অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে ফেসবুক এড। ফেসবুক এড আবার অনেক ধরনের হয়ে থাকে। আমরা নিচে সব ধরনের ফেসবুক এড সম্পর্কে জানব,
ইমেজ এড
ইমেজ এডে স্থির ইমেজ বা ছবি ব্যবহার করে পণ্য বা সার্ভিসের প্রচারনা করা হয়। আর ইমেজ সর্বদাই মানুষের কাছে তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার অন্যতম একটি উপায়।
ইমেজ এডের ক্ষেত্রে আপনার মাথায় রাখতে হবে যে, আপনার ইমেজটি যেন অবশ্যই jpg কিংবা png ফরম্যাটে হয়। আর আপনার হেডলাইন যেন ৪০ ক্যারেক্টারের বেশি না হয়। তবে যদি আপনার মেসেজটি ১২৫ ক্যারেক্টার হয়, তবে উচিত আপনার Call to action এড ফিচার ব্যবহার করা।
ভিডিও এড
ভিডিও এডের মাধ্যমে আপনি অনেক কিছু করতে পারবেন, যা সাধারন ইমেজ এডের মাধ্যমে করতে পারবেন না। আপনি ভিডিও এডের মাধ্যমে পণ্য উপস্থাপন করতে পারবেন, ক্রেতার মতামত তুলে ধরতে পারবেন, ব্র্যান্ডের প্রমোশন করতে পারবেন। আর ভিডিও পোস্টে বর্তমানে ফেসবুকে ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ এনগেজমেন্ট রেট পাওয়া যায় যা সত্যিই দারুন। আর বর্তমান সময়ে ফেসবুকে ভিডিও পোস্টের এনগেজমেন্ট রেট সবচেয়ে বেশি।
তবে আপনি যদি লো কোয়ালিটির ভিডিও ব্যবহার করেন, তখন হিতের বিপরীত হয়ে আপনি তো ক্রেতা পাবেনই না! উল্টো হারাবেন! তাই ভিডিও মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সবসময় ভালো রেজুলেশনের ভিডিও ব্যবহার করবেন।
ক্যারোইউসেল এড
ক্যারোইউসেল এড মূলত একটি প্রোডাক্টের বাকন সেবা বার সার্ভিসের অনেক গুলো ছবি দিয়ে তৈরি করা হয়। সাধারন ইমেজ এডে যেমন শুধু একটি ইমেজ থাকে, ক্যারোইউসেল এডে অনেকগুলো ছবি নিয়ে একটি এড ডিজাইন করা হয়। এখানে ফেসবুক ইউজার ইমেজগুলো স্ক্রল করে করে বিজ্ঞাপনটি দেখে। ক্যারোইউসেল এডে একটি প্রোডাক্টেরই বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি ক্রেতাদের দেখানো সম্ভব হয়। ইকমার্স কোম্পানির জন্ন উত্তম হলেও, রিয়েল এস্টেট, বিভিন্ন আলাদা পণ্য বা সেবার জন্য ক্যারোইউসেল এড মোটেও সুবিধার নয়।
কালেকশন এড
ইকমার্স সাইটের জন্য ইমেজ এড উত্তম, তবে ইকমার্স এডের জন্য শুধু ইমেজ এড দিয়ে আপনি খুব বেশিকিছু উদ্ধার করতে পারবেননা। কেননা ইমেজ এডে ১২৫ ওয়ার্ডের লিমিটেশন থাকে, তাছাড়াও এখানে আপনি আপনার প্রোডাক্ট বা পণ্য সম্পর্কে খুব বেশি কিছু প্রকাশ করতে পারবেননা। আর এই সমস্যা দূর করার জন্য ইকমার্স পণ্যের জন্য ফেসবুকের যে বিশেষ ধরনের এড ক্যাম্পেইন আছে তার নাম হচ্ছে কালেকশন এড। কালেকশন এডের মাধ্যমে আপনি খুব সহজে আপনার পণ্যগুলোর শোকেস করতে পারবেন এবং বিক্রি বাড়াতে পারবেন।
অনেকে বলেন যে ফেসবুকে এড চালানোর জন্য খরচ কত? সত্যি কথা বলতে ফেসবুকে এড চালানর জন্য কোন ফিক্সড খরচ বলা দুষ্কর। এখানে আপনাকে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য কোন এড স্লট বিড করতে হবে। আপনি কোন স্লটের জন্য ঠিক কত বিড করবেন, আপনার এড স্লটটি ঠিক তত নিরাপদ থাকবে। আর ভালো এড স্লট মানে অনেক বেশি পরিমানে এডের পরিদর্শন এবং মানুষকে আকৃষ্ট করা!
কিভাবে ফেসবুক মার্কেটিং শুরু করবেন?
- আপনি শুরুতে ফেসবুকে এড দেওয়ার মাধ্যমে আপনার ফেসবুক মার্কেটিং যাত্রা শুরু করতে পারেন।
- ফেসবুকে মার্কেটিং শুরু করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করে নিতে হবে। ফেসবুকে একটি পেজ ছাড়া আপনি ফেসবুকে আপনার নিজের কোন বিজ্ঞাপন বা এড পরিচালনা করতে পারবেন না। তাই এটা উত্তম যে ফেসবুক মার্কেটিং এ আপনার যাত্রা শুরু করবার আগে একটি ফেসবুক পেজ খুলে নেওয়া।
- ফেসবুক পেজ কিভাবে খুলতে হয়, এই বিষয়টি জানতে আপনি ইউটিউবে সার্চ দিলেও এই সম্পর্কিত অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন। যেগুলো দেখে আপনি আপনার ফেসবুক মার্কেটিং এর জন্য একটি ফেসবুক পেজ খুলতে পারবেন।
- ফেসবুক পেজ খোলার পর আপনাকে ফেসবুক এড ম্যানেজারে যেতে হবে। ফেসবুক এড ম্যানেজারই হচ্ছে মূল স্থান, যেখান থেকে আপনি আপনার ফেসবুক এড তৈরি করবেন।
ফেসবুক এডের উদ্দেশ্য বা এড অবজেক্টিভ নির্ধারণ
এবার ফেসবুকে এড তৈরির ক্ষেত্রে আপনার ক্যাম্পেইনটি আসলে কি উদ্দেশ্যে হবে সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবুন। আপনার এডের অবজেক্টিভ বা উদ্দেশ্য নিয়ে গবেষণা করুন। নিচের বিষয়গুলো আপনার বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য হতে পারে,
- কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের প্রচার
- রিচ বাড়ানো
- বেশি ট্রাফিক বা ভিউ নিয়ে আসা
- বেশি মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা
- বেশি অ্যাপ ইন্সটল করানো
- ভিডিও তে বেশি ভিউ নিয়ে আসা
- কাস্টমার লিড তৈরি করা
- বেশি পরিমানে ইনবক্সে মেসেজ নিয়ে আসা
- আপনার পণ্যের বেশি পরিমানে বিক্রি করা
আরো অনেক উদ্দেশ্য হতে পারে, তবে এগুলো ফেসবুকে এড চালানোর কিছু সাধারন উদ্দেশ্য। আপনি যদি আপনার ফেসবুক এড শুরু করতে চান তাহলে এড শুরুর পূর্বে আপনাকে এরকম কিছু একটা এড অবজেক্টিভ ভেবে নিতে হবে। এড অব্জেক্টিভ ছাড়া আপনি কখনই একটি সফল এড ক্যাম্পেইন চালাতে পারবেননা।
এড ক্যাম্পেইনের নাম নির্ধারণ
উদ্দেশ্য বাছাই করার পরে আপনি আপনার এড ক্যাম্পেইনের একটি নাম দিন। আপনার এড ক্যাম্পেইনের একটি নাম দিলে, পরবর্তীতে আপনার এড ক্যাম্পেইনকে ট্র্যাক করা আপনার জন্য সুবিধা হবে।
আপনি এড ক্যাম্পেইনের নাম দেয়ার পর A/B Testing এর মাধ্যমে সেই এডটি বিভিন্ন ভার্সনে চালিয়ে পরীক্ষাও করে নিতে পারবেন। কোন বড় এড ক্যাম্পেইন শুরুর আগে সকলের উচিত সেই ক্যাম্পেইনটির A/B Testing করে নেওয়া।
বাজেট সেট এবং এড সিডিউল
আপনার এড ক্যাম্পেইনের জন্য বাজেট সেট করতে হবে। আপনি মাসিক বা দৈনিক আপনার এড চালানোর জন্য ঠিক কি পরিমাণ বাজেট দিবেন টা আপনাকে আগেই সিলেক্ট করে দিতে হবে। বাজেট সিলেক্ট করে দেবার পরে আপনাকে আপনার এডটি সিডিউল করে দিতে হবে। আপনি টাইমজোন হিসেবেও এড সিডিউল করে দিতে পারবেন।
ধরুন আপনি আমেরিকার বাজারে আপনার এডটি প্রমোট করবেন। সেক্ষেত্রে আপনি আমেরিকায় কখন দিন সেই হিসেবে আপনার এডটি সিডিউল কর দিতে পারবেন।
অডিয়েন্স টার্গেট
এই পর্যায়ে আপনাকে আপনার এডের জন্য অডিয়েন্স টার্গেট করতে হবে। আপনি লিঙ্গ, বয়স, অবস্থান, ভাষা এসব হিসেবে আপনার অডিয়েন্সকে সিলেক্ট করতে পারবেন। আপনি একবার আপনার প্রথম এড চালানোর পর বুঝতে পারবেন কারা আপনার এডে বেশি রিয়েক্ট করে। সেই হিসেবে আপনি অডিয়েন্স টার্গেট থেকে ঠিক তাদেরকে উদ্দেশ্য করে আপনার এড ক্যাম্পেইন চালাতে পারবেন।
এড প্লেসমেন্ট
এড প্লেসমেন্ট বলতে বুঝায় যে আপনি আপনার এড ঠিক কোথায় কোথায় দেখাতে চাচ্ছেন! অনেকে শুরুর দিকে অটো প্লেসমেন্ট সিলেক্ট করেন। সেইক্ষেত্রে ফেসবুক নিজের ইচ্ছামত কোথায় কোথায় সেই এডটি দেখালো ভালো টা নিজের মত করে দেখিয়ে দেয়, যা অনেকসময় আপনার চাহিদামত নাও হতে পারে।
তবে আপনি চাইলে কাস্টমাইজভাবে আপনার এডের জন্য কাস্টম এড প্লেসমেন্ট ঠিক করে নিতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে আপনি ডিভাইস টাইপ, সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম, অপারেটিং সিস্টেম ইত্যাদি বিষয়কে সিলেক্ট করে দিয়ে আপনার এডটিকে চালাতে পারবেন।
ঠিক এই সকল বিষয় মাথায় রেখে আপনি ফেসবুক মার্কেটিং এর জগতে আপনার প্রথম ফেসবুক এডটি খুব সহজেই তৈরি করে নিতে পারবেন।
ফেসবুক মার্কেটিং এ ভালো এড তৈরি করার কিছু টিপস
- ফার্স্ট ইম্প্রেশন অনেক গুরুত্ব রাখে। আপনার এডের ফার্স্ট ইম্প্রেশন ঠিক রাখতে অবশ্যই ভালো রেজুলেসনের ছবি ব্যবহার করুন।
- আপনার এডে আপনি আসলে মানুষকে কি জানাতে চাচ্ছেন, সেইদিকে ফোকাস দিন। অতিরিক্ত তথ্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন।
- আপনার Call To Action বাটন চালু রাখুন, আর এটিকে এমনভাবে সেট করুন যেন সেটি ফেসবুক ইউজারদের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়।
- আপনার পণ্য এমনভাবে উপস্থাপন করুন যে, মানুষ সেটি ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে ভিডিও এড ব্যবহার করতে পারেন।
- ব্যবহারকারীদের Feedback বিজ্ঞাপনের মধ্যে দিতে পারেন। এতে করে অন্যান্য সাধারন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।
- আপনার ইমেজ কিংবা ভিডিও এডকে ভার্টিকাল এঙ্গেলে তৈরি করুন, যেন মোবাইল ইউজাররা খুব সহজেই সেটিকে উপভোগ করতে পারে।
- A/B Testing এর মাধ্যমে কোন ভার্সনের এড আপনার জন্য ভালো হয় সেটি যাচাই করে নিন, তার পর এড Publish করুন।
ফেসবুক মার্কেটিং এ ফেসবুক এডের মাধ্যমে ভালো ফলাফল পেতে আপনাকে মানুষের মধ্যে একটি হাইপ তৈরি করতে হবে। যেমন কিছুদিন আগে একশন ক্যামেরা তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান গোপ্রো একটি এড ক্যাম্পেইন চালিয়েছে; যেখানে তারা তাদের নতুন হিরো ৯ ক্যামেরার বিক্রি বাড়ানোর জন্য একটি কনটেস্ট আয়োজন করেছে। সেই কন্টেস্টের নাম ছিল গোপ্রো মিলিয়ন ডলার চ্যালেঞ্জ।
গোপ্রো মিলিয়ন ডলার চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে তারা মানুষের কাছে থেকে তাদের নতুন গোপ্রো হিরো৯ ক্যামেরাইয় শুট করা ভিডিও চেয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে বাছাই করে কিছু মানুষকে তারা পুরস্কার দিয়েছে। আর ঠিক এভাবে তারা তাদের নতুন ক্যামেরার একটি সফল মার্কেটিং করতে সক্ষম হয়েছে।
এটা ছিল কেবল একটি উদাহরণ। আপনাকে ফেসবুক মার্কেটিং এ ভালো করতে হলে, এমন কিছু ইউনিক চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়ে আসতে হবে; যেখান থেকে আপনার এড খুব ভালোভাবে আপনার প্রসার ঘটিয়ে দিতে পারবে।
ফেসবুক মার্কেটিং এর অন্যান্য উপায়
অবশ্যই ফেসবুক এডই কেবল ফেসবুক মার্কেটিং এর একমাত্র উপায় নয়! ফেসবুক মার্কেটিং এ আপনি আরো অনেক উপায়ে আপনার ব্র্যান্ডের প্রসার ঘটাতে পারবেন। নিচে আপনার আরো কিছু ধরন সম্পর্কে আলোচনা করব যেগুলোও ফেসবুক মার্কেটিং এর মধ্যে পরে!
ফেসবুক গ্রুপ খুলুন
আপনার ক্রেতা কিংবা ব্যবহারকারীদের একটি জায়গা দেয়া যেখানে তারা উন্মুক্ত ভাবে কথা বলতে এবং আপনার পণ্য, সেবার কিংবা সার্ভিসের সাথে যুক্ত থাকতে পারবে; এর অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে ফেসবুক গ্রুপ। ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করে আপনি অনেক সহজে আপনার নিজের ব্র্যান্ডের প্রসার ও নিজের একটি কমিউনিটি তৈরি করতে পারবেন।
ফেসবুক গ্রুপের সুবিধা,
- আপনার ব্র্যান্ডের একটি হাইপ তৈরি করতে পারবেন
- আপনার পণ্যএর প্রমোশন করবেন বিভিন্ন ইভেন্ট তৈরির মাধ্যমে
- আপনার প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্র্যান্ড সম্পর্কে মানুষের মাঝে তথ্যবহুল কনটেন্ট প্রকাশ করতে পারবেন
- আপনার ফলোয়ারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন
- ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করা সম্পূর্ণ ফ্রি। আপনি বিনামূল্যেই একটি বিশাল কমিউনিটি তৈরি করতে পারবেন
অনেক সময় আপনার নিজের গ্রুপ নাও থাকতে পারে। আর সেইক্ষেত্রে আপনি পেইড মার্কেটিং এর পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে আপনি আপনি বড় বড় গ্রুপের এডমিনদের সাথে যোগাযোগ করে পেইড চুক্তির বিনিময়ে সেখানে আপনার পণ্য, সেবা/ সার্ভিসের প্রমোশন করতে পারেন।
ফেসবুক মার্কেটপ্লেস
ফেসবুক মার্কেটপ্লেস ফেসবুকের তৈরি একটি বিশেষ মার্কেটপ্লেস, যেখানে ক্যাটেগরি হিসেবে ভাগ করে আপনার পণ্য শোকেস করে মানুষের মাঝে তা বিক্রয় করতে পারবেন। ফেসবুক মার্কেটপ্লেস আপনাকে সরাসরি সেসব মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারবে, যারা সত্যি সত্যি কিছু কিনতে চায়; কেননা যারা ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে আসে তারা কিছু না কিছু কেনার জন্যই আসে। সে ক্ষেত্রে আপনার পণ্য যদি ভালো হয়, তবে ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে সেটিকে লিস্টিং করার মাধ্যমে, এখান থেকেও আপনার ক্রেতা অর্জন করে নিতে পারবেন।
আর ফেসবুক মার্কেটপ্লেস সম্পূর্ণ ফ্রি। এখানে আপনার পণ্যের লিস্টিং এর জন্য আপনাকে কোন টাকা খরচ করতে হবেনা।
ফেসবুক বিজনেস পেজ খুলুন
ফেসবুক বিজনেস পেজ হতে পারে আপনার জন্য একটি অলরেডি সেরা মার্কেটিং টুল। আপনার আপনার পেজকে মানুষের মাঝে ফ্রিতে শেয়ার করে ইনভাইট করে এখান থেকেও আপনার ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারবেন। আপনি বেশি বেশি করে মানুষকে আপনার পেজে নিয়ে এসে মানুষের সাথে এনগেজমেন্ট ঘটিয়ে আপনার পেজ থেকেই মানুষের মাঝে আপনার সার্ভিসকে পৌঁছে দিতে পারবেন।
আপনি যদি নিজ উদ্যোগে অনেক বেশি মানুষকে এখানে যুক্ত করে একটি ভালো এনগেজমেন্ট নিয়ে আসতে পারেন, তবে ফেসবুক পেজ থেকেই ফ্রিতে অর্গানিকভাবে আপনার ফেসবুক মার্কেটিং চালিয়ে নিতে পারবেন। আর যদি পেইড ভাবে মার্কেটিং করতে চান, তখন তো ফেসবুক এড সেবার আছেই, যা সম্পর্কে আপনার উপরে আলোচনা করেছি।
ফেসবুক মার্কেটিং মনিটরিং
আপনি পেইড ফেসবুক মার্কেটিং পরিচালনা করেন কিংবা ফ্রি! আপনার মার্কেটিং স্ট্র্যটেজি পর্যালোচনার জন্য ফেসবুকের রয়েছে কিছু ফ্রি টুলস। এই টুলগুলি ব্যবহার করে আপনি আপনার ক্যাম্পেইন মনিটর করতে পারবেন। নিচে এই টুলগুলির নাম উল্লেখ্য করলাম,
- এড ম্যানেজার
- ইভেন্ট ম্যানেজার
- মেটা বিজনেস সুইট
এই টুলস গুলি ব্যবহার করে আপনি বিস্তারিত ভাবে আপনার প্রতিটি ক্যাম্পেইন সকল দিক দিয়ে খুব ভালোভাবে মনিটর করতে পারবেন।
আরো কিছু ফেসবুক মার্কেটিং রিসোর্স
আপনার হয়ত ফেসবুক মার্কেটিং সম্পর্কে অনেক অতিরিক্ত সাহায্য লাগতে পারে। অনেক সময় আপনি কাজ করতে করতে আটকে গেলেন, তখন এখান থেকে আপনি সহযোগিতা নিতে পারেন।
ফেসবুক বিজনেস হেল্প সেন্টার
এখান থেকে আপনি ফেসবুকের তরফ থেকে বিভিন্ন সমস্যা থেকে উদ্ধার হবার জন্য আর্টিকেল আকারে তথ্য পেয়ে যাবেন।
ফেসবুক ব্লুপ্রিন্ট
ফেসবুক ব্লুপ্রিন্ট থেকে আপনি আপনার সফল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালানোর জন্য বিভিন্ন ফ্রি মার্কেটিং টিপস এবং কোর্স পেয়ে যাবেন।
সপিফাই ব্লগ
সপিফাই অনেক জনপ্রিয় একটি ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি প্লাটফর্ম। আপনি যদি ইকমার্স ব্যবসা পরিচালনা করেন তবে তাদের ব্লগ থেকে ফেসবুকে ইকমার্স মার্কেটিং এর জন্য অনেক টিপস পেয়ে যাবেন।
ফেসবুক মার্কেটিং নিয়ে করা কিছু প্রশ্ন
ফেসবুক মার্কেটিং কি?
ফেসবুক মার্কেটিং হচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে কোন ব্যবসা কিংবা সেবাকে মানুষের মাঝে পৌঁছে দেবার অনন্য উপায়। ফেসবুক এড কিংবা ফেসবুক গ্রুপ, ফেসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি কয়েকটি উপায়ে আপনার পণ্য কিংবা সেবার প্রচারনা খুব সহজেই ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাঝে করতে পারবেন।
কিভাবে ফেসবুক মার্কেটিং শুরু করব?
ফেসবুক মার্কেটিং শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথমেই যা করতে পারেন। একটি ফেসবুক বিজনেস পেজ খুলুন। তারপর ফেসবুক এড ম্যানেজারে এক্সেস নিন, আপনার এড তৈরি করে এডটি প্রকাশ করুন।
ফেসবুক মার্কেটিং কি ফ্রি?
আপনি যদি কেবল ফেসবুক পেজ , ফেসবুক মার্কেটপ্লেস কিংবা ফেসবুক গ্রুপ নিয়ে কাজ করেন, তবে অনেকাংশে এটি ফ্রি। তবে আপনি ফেসবুকে এড তথা বিজ্ঞাপন দেখাতে চাইলে আপনাকে টাকা খরচ করতে হবে।
কিভাবে দারুন ফেসবুক এড তৈরি করব?
ফেসবুকে দারুন এড তৈরি করতে আপনার এডের কনটেন্ট খুবই মিনিমালিস্টিক রাখুন। খুব বেশি ঘিজিবিজি তথ্য এডে দেয়া থেকে বিরত থাকুন। উচ্চ রেজুলেসনের ভালো গ্রাফিক্সের ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করুন। আপনার এড ক্যাম্পেইনের জন্য অনন্য কিছু প্লান বের করুন এবং আপনার ব্র্যান্ডের একটি হাইপ তৈরি করুন।
You're reading eProjonmo, the versatile technology news portal of bd.