স্যামসাং রহস্য: মুদি দোকান থেকে টেক জায়ান্ট কোম্পানি

১৯৩৮ সালে এইটা ভাবা সম্পূর্ণ রূপ এ অসম্ভব ছিলো যে একটা ছোট্ট বাণ্যিজিক প্রতিষ্ঠান এত বিশাল এবং সফল প্রতিষ্ঠান এ পরিবর্তন হবে।

স্যামস্যাং, ব্যাবসা শুরু হয় নুডলস,শুকনা মাছ,সবজি বিক্রি এর দ্বারা। তবে বর্তমানে এ স্যামসাং এর প্রসার ফোন, ল্যাপটপ ছাড়াও হেলিকপ্টার, ট্যাংক এ ও সরিয়ে গিয়েছে। এমনকি তাদের আকাশচুম্বী সাফল্য এর অংশ হতে রাস্তা, হসপিটাল,বস্ত্র ।

স্যামসং, শুরুর গল্প

লি বিয়াং চুল, স্যামসং এর প্রতিষ্ঠাতা। মাত্র ২৮ বছর বয়সে সে স্যামসং আবিষ্কার করেন। এক রাত এ লি এর মনে হয় সে তার জীবন এ এগিয়ে যেতে পারছেন না। এই চিন্তা থেকেই সে সিদ্ধান্ত নেয় ব্যবসা তে নামা এবং সফল হ‌ওয়ার। শুরুতে স্যামসং এর ব্যবসা শুরু হয়েছিলো চিনি এর উৎপাদন দ্বারা। এবং বেশ ভালোমানের মুনাফা আয় হতো।

স্যামসং এর অর্থ তিনটা তারা। তিন তারা হয়তোবি এইটা দ্বারা আমরা কোন কিছু রেট করতে‌ পারি। তবে কোরিয়া তে এই তিন সংখ্যা টি অনেক বিখ্যাত। যা কোনো কিছু বিশাল , চিরস্থায়ী , শক্তিশালী এর প্রতিরূপ। অবশ্য এই তিনটা শব্দ বর্তমান এ স্যামসং এর বিশালতা কে ব্যাখা করার জন্য প্রযোজ্য।

তবে প্রথম এ স্যামসং এত দূর আসতে পারবে এইটা অসম্ভব ছিলো । কারন হিসেবে বলা যায় কোরিয়ান যুদ্ধ। এবং কোরিয়া এর বাণিজ্য রপ্তানি এর উপর নির্ভর হয়ে পড়ে। তো চিনি এর উৎপাদন এর পাশাপাশি বস্ত্র শিল্প এ ও স্যামসং এর বিস্তার করতে থাকে। এবং সফল হ‌ওয়ার পর লি তার অর্জিত মুনাফা গুলো বিনোয়োগ করতে শুরু করে মুদির দোকান এবং ইন্সুরেন্স ব্যবসা তে । আজকের জগৎ এ স্যামসং ইন্সুরেন্স দাতা কোরিয়াতে।

১৯৬৮ সালে স্যামসং এর সদস্যরা একটি সম্মেলন এর অয়োজন করে। এবং সিদ্ধান্ত নেয় পরবর্তী তে তাদের ব্যবসা ইলেকট্রনিক্স এর দ্বারা পরবর্তী ধাপে যেতে। এক বছর এর মধ্যে স্যামসং ইলেক্ট্রনিক্স ১২-ইঞ্চি কালো-সাদা টিভি এর সৃষ্টি করে। এবং তাদের এই ব্যবসা খুব দ্রুত এবং সফল ভাবে প্রসার ঘটে এবং দশক পারি যেতে না যেতেই তারা প্রথম স্থান এ আসে কালো-সাদা টিভি এর উৎপাদন এ। এবং তারা সকল ধরনের ঘর এর ব্যবহার এর যন্ত্র উৎপাদন শুরু করেন। ১৯৭৯- সালে মাইক্রোওয়েভ,১৯৮০-সালে এয়ারৎকন্ডিশনার, ১৯৮১-তে রঙিন টিভি এবং ১৯৮৩ তে তারা পার্সোনাল কম্পিউটার বানায়। এবং তারা উপলব্ধি করে এই যন্ত্র পাতি তৈরি এর সময় অনেক ছোট ছোট উপাদান বাহির এ থেকে আনতে হচ্ছে। এবার স্যামসং রূপ নেয় সেমিকন্ডাকটর কোম্পানি তে যারা এই ধরনের উপাদান বানায় এবং বিক্রি করে। এবং তারা সেইটার রপ্তানি ও করতে শুরু করে। তালের একজন রেতা আইফোন, যারা স্যামসং এর মেমোরি চিপ ব্যবহার করে নিজেদের পণ্য তে।

কিন্তু স্যামসং এর বিশালতা এখানেই শেষ না। বড় বড় জাহাজ উৎপাদন এ স্যামসং প্রথম স্থান এ। অন্য ক্ষেত্র আছে স্যামসং এর “স্যামসং নিমার্ণ যেখানে বড় বড় রাস্তা,ট্যানেল তেরি করা হয়। এমনকি বিশ্বের বড় বড় বিল্ডিং বুর্জ খালিফা ও স্যামসং এর তৈরি। কোরিয়া তে তাদের তৈরি থিম পার্ক, হোটেল এবং “স্যামসং টাউন” নাম এর স্থান ও আছে। স্যামসং এর প্রসারতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতাল বানাতেও ছড়িয়ে গিয়েসে।

দুর্নীতির রাজবংশ

বড় ব্যবস্যা তবে দুর্নীতি থাকবে না এইটা বলা ভুল। কোরিয়ার এর যুদ্ধ এর সময় স্যামসং এবং অন্যান্য বড় বড় প্রোতিষ্ঠান লোন পেয়েছিলো। যা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে অনেক উপকার করে। আড়ার বলা যায় স্যামসং কোরিয়া এর বাণিজ্য এর উন্নয়ন এ সম্পৃক্ত। প্রথমত অনেক কোরিয়ানদের আয় এর উৎস্য স্যামসং। আবার দেশের সরকার ও স্যামসং এর উপর নির্ভরশীল। শুধু তাই নয় স্যামসং এর প্রযুক্তি ব্যবস্যা সরকার কে সম্পূর্ণ রূপে আত্ননির্ভরশীল করে তোলে প্রযুক্তি এর আমদানি সরকার বন্ধ করে দেয়। স্যমসং এর প্রতিষ্ঠাতা এবং লি এর মধৌ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্যামসং কে লোন, ট্যাক্স থেকে বাচিয়ে রাখে। এমনকি দেশটির বড় বড় ব্যাংক থেকেও স্যামসং লাভবান হয়। এক প্রতিবেদন এ প্রকাশ পায় শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান স্যামসং এর উপর একটি দেশ কতটা নির্ভরশীল হয়ে ঊঠে। স্যামসং ক্ষমতা দেশের জন্য উপাকৃত হলেও দেশটির ছোট ছোট ব্যবসা কে ক্ষতি করে। স্যামসং এর ক্ষমতা যেকোন ও প্রতিষ্ঠান কে শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

লি বিয়োং চুল এর মৃত্যু ঘটে ১৯৮৭ তে তারপল প্রতিষ্ঠানটির ক্ষমতা পায় লি কান হি। এভং তার ক্ষমতা কখনো স্যামসং কে সমোলোচনা এর মুখে ফেলে দেয়। ১৯০৬ সালে সরকার কে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করার আরোপ তার উপর আনা হয়। আবার২০০৮ দেশের ক্ষমতাধর রাজনৈতিক দল গুলোর সাথে যুক্ত থেকে অনৈতিক কাজ করার আরোপ ও আছে তার উপর।‌ তবে দেশের সরকার এর সাথে বন্ধুত্ব এর জন্য তাকে জেলের শিকলে বাহ তার ব্যবস্যা বাহ সম্মানে তা প্রভাব ফেলে নেই। এবং তার উপর দুর্নীতি, ট্যাক্স জালিয়াতি এর মামালা আনা হলেও সরকার এমনকি দেশের কোনো গণমাধ্যম এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে না। বোঝাই যায় স্যামসং এর প্রধান এর ক্ষমতা দেশের প্রধান এর চেয়েও বেশি। পরবর্তীতে তার পুত্র স্যামসং এর দায়িত্ব নেয় এবং এমন আরোপ তার উপরেও আনা হয়। এবং তার উপরেও কোনো আরোপ আনা হয় না। দেখাই যায় দেশের সরকার ও স্যামসং এর দৃঢ় বন্ধন।

বিস্ফোরিত ফোন

২০১৬ সালে স্যামসং এর ফোন নোট-৭ এর বিস্ফোরন হ‌ওয়ার ঘটনা প্রতিষ্ঠান টির ৫ বিলিয়ন ডলার এর ক্ষতি করে। এমন অনেক ঘটনা এই ফোন এর বিরুদ্ধে আনা হয় বিফোরন এর ঘটনা। এবং উড়োজাহাজ ও এই ফোনকে নিষিদ্ধ করে যাত্রা এর ক্ষেত্রে। এবং স্যামসং এই সমস্যা এর সমাধান এ কোনো‌ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কারন ছিলো এই ফোন এর ব্যাটারি। তবে আরো একটা কারন বলা যায় আইফোন এর সাথে প্রতিযোগিতা। স্টিভ জবস স্যামসং কে “কপি ক্যাট” বলেন। যার জন্য স্যামসং নিজেদের মডেল এ বিভিনতা ও অন্যান্যতা আনার চেষ্টায় গ্যালাক্সি নোট চালু করেন। যা ফোন ও যাবলেট এর সংমিশ্রণ। নোট -৭ যামসং প্রতিযোগিতা এর মানসিকতা থেকে দ্রুত, বিশৃঙ্খলা এর সাথে সময় সমপূর্ণ করে। নোট-৭ এ ছিলো অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য তবে উন্নতির ক্ষেত্রে খেয়াল করা হয় নি। এক সময় অনলাইন গেম খেলার ক্ষেত্রে বিস্ফোরক এর ক্ষেত্রে নোট-৭ কে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে স্যমসং তা নিষিদ্ধ করতে পদক্ষেপ নেয়।

তবুও আজকের বিশ্বে স্যামসং স্মার্ট ফোন উৎপাদন এ এক নাম্বারে শুধূ তাই না নিজেদের ফোন এর উন্নতি এর ক্ষেত্রে তারা স্বচেষ্ট এবং প্রতিযোগিতার এর সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলসে। বিস্ফোরক ফোন স্যামসং কে দমাতে পারে নাই বরং তাদের পণ্য এর আরো ভালো করার জন্য উৎসাহ দিয়ে গিয়েসে।

You're reading eProjonmo, the versatile technology news portal of bd.

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comments (২)