স্মার্টফোন কেনার গাইড : স্মার্টফোন কেনার আগে যা যা মাথায় রাখবেন

13
0

ভালো একটি স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে প্রথমত আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
আপনাকে প্রথমেই ভেবে রাখতে হবে, আপনি স্মার্টফোনটি দিয়ে কি কি করবেন।
আর এই আর্টিকেলের প্রতিটি অংশ আপনাকে আপনার পরবর্তী সেরা স্মার্টফোনটি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে হবে একটি দারুন গাইড।

আমাদের বর্তমান প্রযুক্তি ময় জীবনে স্মার্টফোনের ব্যবহার সর্বত্র। মানুষ এখন জত বেশি বেশি স্মার্টফোন কিনছে , দেখা যাচ্ছে স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে নানান রকম অপশনও তত বেশি বেশি বেড়ে যাচ্ছে। নানান রকম অপশন এর ডালির কারনে স্মার্টফোন কোনটি কিনবেন এই সিদ্ধান্ত নেয়াও এখন চিন্তার একটি বিষয়। আজকের এই আর্টিকেলটি আমি সাজিয়েছি, একটি স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে আপনি কোন বিষয়গুলোতে বেশি নজর দিবেন সেসব নিয়ে, বলা যেতে পারে এই আর্টিকেলটি আপনার স্মার্টফোন কেনার ছোটো খাট একটি গাইড।

স্মার্টফোন কেনার আগে কোন বিষয় মাথায় নেবেন?

প্রসেসর এবং র‍্যাম হিসেবে স্মার্টফোনের পারফর্মেন্স

আপনার স্মার্টফোনের মেইন ফাংশনাল ডিভাইস হিসেবে যে কম্পোনেন্টটি মাদারবোর্ড এর ভেতর যুক্ত থাকবে সেটি হচ্ছে সেই স্মার্টফোনের প্রসেসর তথা চিপসেট, একে আরেকভাবে বলা হয় ‘এসওসি’ তথা সিস্টেম অন চিপ। এই চিপসেট হল সম্পূর্ণ সিস্টেম এর মস্তিষ্ক। বর্তমান সময়কার চিপসেট গুলো এআই তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেডি করে তৈরি করা হয়, যার ফলে আগের চাইতে এখনকার স্মার্টফোনগুলো হয় আরও বেশি স্মার্ট। আপনার স্মার্টফোনের প্রসেসর তথা চিপ্সেট কেবল যে আপনার ফোনের ফাংশন গুলো বিনাবাধায় পরিচালনা করে তা কিন্তু নয়! আরো কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন ইমেজ প্রোসেসিং।

যেমন স্যামসাং এর অনেক স্মার্টফোন দুইটি প্রসেসর ভেরিয়েন্ট এর সাথে আসে, যেমন একটি আসে স্ন্যাপড্রাগন ভেরিয়েন্ট এর সাথে আবার অন্যটি আসে এক্সিনস ভেরিয়েন্ট এর সাথে। এখানে অনেক রিভিউয়াররা বলেন যে, স্ন্যাপড্রাগন ভার্সনটি এক্সিনস ভার্সনের চাইতে চালিয়ে একটু বেশি মজা, আর সেটিতে ইমেজ প্রোসেসিংও এক্সিনস ভার্সনের চাইতে ভালো।

তো স্মার্টফোন কেনার আগে এটা জানা খুব জরুরি যে, আপনি এর সাথে কোন প্রসেসরটি পাচ্ছেন, আর যে প্রসেসরটি পাচ্ছেন সেটি স্মার্টফোনএর পারফর্মেন্স এর সাথে কতোটা যাচ্ছে।

বর্তমানে বাজারে হাইএন্ড স্মার্টফোনের জন্য সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন যে চিপসেট গুলো সেগুলোহচ্ছে, স্ন্যাপড্রাগন, অ্যাপেল এর ‘এ১৩’ বায়োনিক, স্যামসাং এর এক্সিনস ৯৯০, হুয়াওয়ে এর কিরিন ৯৯০। অ্যাপেল এর প্রসেসর বিখ্যাত তাদের একদম ইউনিক সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার ইকোসিস্টেম এর জন্য। অ্যাপেল এর বায়োনিক এর মত এন্ড্রয়েড জগতে জনপ্রিয় স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর। যদি আপনার মিড রেঞ্জ স্মার্টফোন হয়, তবে আপনি স্ন্যাপড্রাগন ৭৩০, ৭৩০জি, স্ন্যাপড্রাগন ৬৭৫, মিডিয়াটেক হেলিও জি৯০টি, জি৮৫ এর দিকে যেতে পারেন।

স্মার্টফোন চলমান অবস্থায় তার সকল অ্যাপলিকেশন গুলোর ডাটা যেসিস্টেম মেমোরিতে জমা হচ্ছে, সেটিই হচ্ছে র‍্যাম। আর স্মার্টফোন সচল রাখতে, প্রতিটি স্মার্টফোনের একটি অংশ তো সেই স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেমই দখল করে থাকে। পর্যাপ্ত র‍্যাম আপান্র স্মার্টফোনে একসাথে একাধিক অ্যাপলিকেশন খুব সুন্দর ভাবে চলার জন্য পরিস্থিতি তৈরি করে দিবে। আপনার স্মার্টফোনে মাল্টিটাক্সকিং অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে র‍্যাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে বহু স্মার্টফোনে তো নির্মাতারা ১২-১৬ জিবি র‍্যাম দিয়ে দিচ্ছে, এটিও অবশ্যই আপনার জন্য ভালো নয় একদমই! যদিনা আপনার একসাথে ১০-১১ টি অ্যাপলিকেশন চালানোর ইচ্ছা থাকে! আপনি যদি লাইট স্মার্টফোন ব্যবহারকারি হন, যেমন আপনি কলিং, মেসেজিং, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব,ইন্টারনেট সার্ফিং এর জন্য স্মার্টফোন কিনবেন; তবে আপনার জন্য ৩-৪ জিবি র‍্যামই পর্যাপ্ত। তবে পাওয়ার ইউজার, যেমন ধরুন গেমার, তারা ৬-৮ জিবি র‍্যামের স্মার্টফোনের দিকে যেতে পারেন। আর নিঃসন্দেহে ৩-৪ জিবি র‍্যামের মিডরেঞ্জ স্মার্টফোনগুলো কখনই সেভাবে গেমিং এরজন্য বানানো হয়না। তাই এই গাইড অনুসারে গেমারদের জন্য সাজেশন থাকবে ৬-৮ জিবি র‍্যামের দিকে যাওয়ার জন্য।

অপারেটিং সিস্টেম

এই বিষয়টি আলোচনা করার আগে, আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি আইওএস নাকি এন্ড্রয়েড ব্যবহার করবেন। কেননা দুইটি অপারেটিং সিস্টেম এরই ভালো এবং খারাপ দুইদিকই রয়েছে। আপনার যদি আপনার স্মার্টফোনকে ভালোবাসার খুব সখ হয়, আপনার যদিআপনার স্মার্টফোন নিয়ে নানারকম এক্সপেরিমেন্ট এবং কাস্টমাইজেশন করার খুব ইচ্ছা থাকে, তবে নিঃসন্দেহে আপনি এন্ড্রয়েড এর দিকে আসুন। তবে আপনি যদি সাধারণ কিন্তু খুবই শক্তিশালী একটি অপারেটিং সিস্টেম চান, যা খুব ভালো একটি পিরিয়ড পর্যন্ত আপনাকে আপডেট এবং সাপোর্ট দিবে, তবে আপনার জন্য আইওএস।

তবে বলতে গেলে এন্ড্রয়েড সবচেয়ে শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম, তবে আইওএস এর মত অত সাধারণ নয়। আইওএসএ অনেক বেশি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন ইন্টারনেট থেকে আপনি এমন কোন অ্যাপ ইন্সটল করতে পারবেন না, যেটা অ্যাপেল অ্যাপস্টোরে নেই। আপনি আইওএসে কোন রকম লঞ্চার ব্যবহার করতে পারবেননা, আবার আপনার হোমপেজও ঠিকভাবে কাস্টমাইজ করা যাবে না। এন্ড্রয়েড ইউজারদের মত অ্যাপেল ইউজাররা তাদের ফোনে স্প্লিট স্ক্রিন সুবিধা পাবেন না।

তবে কিছু সুবিধা আছে নিশ্চয়ই যেমন, আইমেসেজ, ফেসটাইম, নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট, কোনরকম বিজ্ঞাপন হীনতা ইত্যাদি! যেমন শাওমির মিইইউআই তে বিজ্ঞাপন এর দেখা মেলে।

ইউজার ইন্টারফেস

বর্তমানে বড় বড় স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব স্কিন তথা ইউআই এর সাথে বাজারে স্মার্টফোন নিয়ে আসে। যেমন ওয়ানপ্লাস এর অক্সিজেন ওএস, যেটি কিনা অনেকটা স্টক এন্ড্রয়েডএর মতই। স্যামসাং এর অয়ান ইউআই ২ এবং শাওমির মি ইউআই। শাওমির মি ইউআইতে বিজ্ঞাপনের দেখা মিললেও, এটি বেশ ভালোভাবে অপটিয়ামিজড এবং সাজানো গোছানো ইউজার ইন্টারফেস। আবার অন্যদিকে রিয়েলমি এবং অপো তে ব্যবহার করা কালারওএস অনেকটা আইওএস এর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ডিজাইন করা।

তাই অবশ্যই স্মার্টফোন আগে ইউজার ইন্টারফেসগুলো একবার এক্সপেরিয়েন্স করে নিবেন, আপনার কাছে যে ইউজার ইন্টারফেস ভালো লাগে সেই স্মার্টফোন এর দিকে যাবেন।

একটি ভালো মানের ডিসপ্লে

এখনকার স্মার্টফোন গুলোর দিকে তাকালে বুঝবেন, স্মার্টফোনের ডিসপ্লে এর সাইজ দিন দিন বেড়েই চলেছে। আজ থেকে ২ বছর আগেও যেই সাইজের ডিসপ্লে মানুষ হারিকেন দিয়ে খুজেও বাজেট ফোনে পেত না, তা এখন লো বাজেট স্মার্টফোনেও পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে অনেক স্মার্টফোন, মোবাইল ফোন এর গণ্ডি থেকে বেরিয়ে ৬.৯ ইঞ্চি ডিসপ্লে সাইজ নিয়ে ফ্যাবলেট এর কাতারে প্রবেশ করছে।

তবে প্রশ্ন যখন ডিসপ্লে আপনি মিডিয়া স্ট্রিমিং এর জন্য ভালো অভিজ্ঞতা চান অথবা গেমিং এর জন্য আমি সাজেস্ট করব আপনি যে ডিসপ্লেই নেন , তা যেন ৫.৭ ইঞ্চি কিংবা তার চাইতে বড় হয়। যদি ডিসপ্লে টাইপের দিকে যান, তবে দেখবেন এলসিডি আবার কোনোটি অমোলেড! অমোলেড ডিসপ্লে এর ভেতর আবার পাবেন দুইটি ভেরিয়েন্ট, একটি হচ্ছে ওলেড এবং আরেকটি সুপার অমোলেড, যেগুলোতে আপনি পাবেন আরো বেশি কনট্রাস্ট এবং কালোকে আরো বেশি কালো। আর অমোলেড ডিসপ্লেগুলো ব্যাটারি সেভারও বটে, কেননা, কালোর সময় অংশের পিক্সেলই নিভে যায়, মানে অমোলেড ডিসপ্লেতে কালো মানে আসল কালো! যদি রেজুলেশন এর ব্যাপারে আসি, তবে দেখবেন ফুল এইচডি, ফুল এইচডি প্লাস, কুয়াড এইচডি। কুয়াড এইচডি ডিসপ্লেতে ছবিগুলোকে দেখবেন আরো অনেক বেশি ক্রিস্পি।

ইন্টারনাল স্টোরেজ এর পরিমান

বর্তমান সময়ের স্মার্টফোন গুলোর মধ্যে যেগুলো মিডরেঞ্জ সেগুলোতে আপনি পাবেন ৬৪ জিবি স্টোরেজ। আর ফ্লাগশিপ গুলোতে পাবেন ১২৮ জিবি থেকে শুরু করে ৫১২ জিবি! বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির যুগে স্টোরেজ খুবইমূল্যবান, আর স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে মূল্যবান প্রতিটি জিবি। আপনি যে কয় জিবিই ইন্টারনাল স্টোরেজ নেন, তা ভরতে আপনার বেশি বেগ পেতে হবে না, ছবি ভিডিও অ্যাপস; সব মিলেই স্টোরেজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই মাথায় রাখবেন আপনার ফোনে এক্সট্রা মেমোরি কার্ড লাগানো যায় কিনা এবং আমার সাজেশন থাকবে ৬৪ জিবির নিচে না যাওয়ার!

আপনার দৈনন্দিন চাহিদার জন্য যেটুকু ব্যাটারি লাইফ দরকার

বর্তমান সময়ের ফ্লাগসিপ স্মার্টফোন গুলোর ব্যাটারি এর ক্ষেত্রে গোল্ডেন স্ট্যান্ডার্ড হল ৬ ঘন্টার স্ক্রিন অনটাইম। এর চাইতে বেশি হলে তা আপনার জন্যই ভালো। তবে মিড রেঞ্জ ফোনগুলোও এখন ৮-৯ ঘন্টা পর্যন্ত স্ক্রিন অনটাইম দিতে সক্ষম। তবেঅবশ্যই মাথায় রাখতে হবে তুলনামূলক ভালো ইউজে জেনো স্মার্টফোনটি অন্তত সারাদিন ব্যাটারি ব্যাকআপটা দেয়। তো আপনি যে স্মার্টফোনটি কিনতে চাচ্ছেন, একবার সেটির অনলাইনে ব্যাটারি টেস্ট দেখে নেয়ার অনুরোধ থাকবে। আর সেই স্মার্টফোনের পাওয়ার সেভিং মোড কিরকম সেটিও একবার দেখে নিবেন।

আপনার বাজেটের সাথে যে ক্যামেরা যায়

এখনকার সময়ে মাল্টি ক্যামেরা স্মার্টফোন অনেক বেশি সাধারণ ব্যাপার, বরং আপনি সিঙ্গেল ক্যামেরা সহ স্মার্টফোন খুজেই পাবেননা। আপনি সাধারণত একটি প্রাইমারি সেন্সর পাবেন যেটি হবে সবচেয়ে বেশি মেগাপিক্সেলএর। পাশাপাশি একটি পোর্ট্রেইট এবং ওয়াইড এঙ্গেল ক্যামেরা পাবেন। তাছাড়াও এখন অনেক স্মার্টফোন নির্মাতা সাথে টিওএফ লেন্স, ম্যাক্রো লেন্স এবং কালার ফিল্টার লেন্স সমৃদ্ধ এক্সটা ক্যামেরাও মাল্টি ক্যামেরা বান্ডেলএর ভেতর প্রদান করে দেয়। তো পরামর্শ থাকবে আপনার স্মার্টফোনে প্রাইমারি শুটারের সাথে যেন অবশ্যই একটি পোর্ট্রেইট এবং ওয়াইড আঙ্গেল সেকেন্ডারি ক্যামেরা থাকে। বেশি মেগাপিক্সেলের ভেতর কিছুই নেই; বেশি মেগাপিক্সেল আপনাকে ভালো ছবি দেবে না, সুতরাং অবশ্যই মাথায় রাখবেন আপনার ক্যামেরা সেন্সরের মান কিরকম।

তাছাড়াও এখনকার অনেক স্মার্টফোনে পিক্সেল বিনিং প্রযুক্তি থাকে, যেখানে সেন্সর ৪ বা তার অধিক পিক্সেলকে একটি বড় পিক্সেলে রূপান্তর করে ফেলে। আর এতে করে আরো বেশি মানসম্পন্ন ছবি ধারন সম্ভব হয়। এক্ষেত্রেও আপনি আপনার পছন্দের স্মার্টফোনগুলোর ক্যামেরা পারফর্মেন্স রিভিউ অনলাইনে দেখে যাবেন।

তাছাড়াও আরো যে বিষয়গুলো দেখবেনঃ

  • ওয়্যারলেস চার্জিং
  • গেমিং মোড
  • ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সর
  • ফেসআনলক সুবিধা
  • ব্লুটুথ ভার্সন
  • আইপি রেটিং
  • ডুয়াল সিম
  • রিভার্স চার্জিং সুবিধা
  • স্টেরিও স্পিকার
  • এনএফসি
  • ডুয়াল ব্যান্ড ওয়াইফাই

You're reading eProjonmo, the versatile technology news portal of bd.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *