কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং তথা সিএসই বর্তমান সময়ের অন্যতম ট্রেন্ডিং সাবজেক্ট। স্কুল কলেজ থেকেই ছেলেমেয়েরা এই সাবজেক্টে পড়াশোনার জন্য অনেক বেশি আগ্রহ দেখায়। বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর দিকে তাকালেও দেখা যায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতিবছর ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে বুঝে এবং না বুঝে সিএসই তথা কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টে ভর্তি হচ্ছে।
কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং তথা সিএসই একটি সুপার সাবজেক্টে পরিণত হয়েছে, সবাই মনে করেন যে, কেউ যদি সিএসইতে ভর্তি হয় তাহলেই সে আইটি জগতের সবকিছুর সম্পর্কে একদম এক্সপার্ট হয়ে যাবেন। তবে মজার বিষয় হচ্ছে কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং তথা সিএসইতে পরেও আপনি অনেক অনেক বিষয়ে এক্সপার্ট হতে পারবেন না।
আজকের লেখায় আমরা কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং তথা সিএসই এই ট্রেন্ডিং সাবজেক্টটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। জানব, সিএসই কাদের পড়া উচিত, সিএসই কি, সিএসই’তে পরে বেকার বেশি কেন, সিএসই শিক্ষার্থীদের পতনের কারণ, সিএসই ক্যারিয়ার, সিএসই ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন সহ যাবতীয় সবকিছু সম্পর্কে!
Table of Contents
সিএসই কি?
সিএসই কি… উত্তর হচ্ছে, সিএসই একটি সাবজেক্ট যার সম্পূর্ণ রূপ হচ্ছে কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং। মূলত কম্পিউটার, কম্পিউটিং এর লজিক, এই সম্পর্কিত যন্ত্রপাতি তাদের মূল গঠনতন্ত্র, বেসিক সফটওয়্যারে ডিজাইন ইত্যাদি এই সাবজেক্টটির মূল পাঠ্য বিষয়। সিএসই কে বলা যায় ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাবফিল্ড। এখানে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, প্রসেসর আর্কিটেকচার, প্রসেসর ডিজাইন, অপারেটিং সিস্টেমস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা হয়।
সিএসই ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন
আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক বেশি পরিমাণে শিক্ষার্থীরা সিএসই কিংবা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে পড়াশোনা করে থাকেন। তাছাড়াও অনেকে আছেন যারা সিএসই তে না পড়েও কম্পিউটার সাইন্স বা সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে চান। তবে আমাদের অনেকেরই ধারনা নেই যে, বাংলাদেশে এই সেক্টরে বেতন কত, সহজ ভাষায় একজন সিএসই ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কিরকম হয়। তো এখন আমরা এখন সিএসই ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কেমন হয় সেই ধারনা নেয়ার চেষ্টা করব।
আপনি যদি সিএসই গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরে কিংবা ফাইনাল ইয়ারে ইন্টার্নশিপের জন্য চিন্তা করেন! তখন যদি ছোট কোন কোম্পানি বা ডেভেলপমেন্ট ফার্মে জয়েন করতে চান, তবে সম্ভবত তারা আপনাকে আনপেইড ইন্টার্নশিপ অফার করবে, অর্থাৎ তারা আপনাকে ইন্টার্নশিপের বিনিময়ে কোন টাকা দিতে চাইবে না। আপনি যদি মিডরেঞ্জ কোন কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করতে যান তারা আপনাকে ৫ হাজার থেকে ১০-১২ হাজার টাকার মতন অফার করবে। তবে হাতে গোনা কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা আপনাকে ২৫ হাজার টাকার মতও অফার করতে পারে, তবে এমন কোম্পানি আমাদের দেশে অনেক কম!
আপনি যদি একটি স্টার্ট-আপ কিংবা মিডলেভেল কোম্পানিতে ফ্রেশ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জয়েন করেন তবে আপনার বেতন হবে ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা। একইভাবে আপনি যদি একটি ভালো রেপুটেটেড সফটওয়্যার কোম্পানিতে জয়েন করেন তাহলে ফ্রেশ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনার স্যালারি হবে ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আপনি যদি ফ্রেশ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বাংলাদেশে যে বিদেশি কোম্পানির শাখা রয়েছে, এগুলোতে জয়েন করেন; তখন আপনার বেতন হবে ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
আপনি কয়েকবছরের অভিজ্ঞতা সহ যদি দেশের কোন মিড লেভেল কোম্পানিতে জয়েন করেন তাহলে আপনার বেতন হবে ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আপনি কয়েকবছরের অভিজ্ঞতা সহ যদি দেশের কোন নামি কোম্পানিতে জয়েন করেন তাহলে আপনার বেতন হবে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা। তবে এগুলো নির্ভর করে শুরুতে আপনি ফ্রেশ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যে কোম্পানিতে জয়েন করেছিলেন সেখান থেকে কি কি স্কিল অর্জন করেছেন এবং বর্তমানে আপনার দক্ষতা কেমন!
আপনি যদি কোন কোম্পানি থেকে বাদ পরে গিয়ে অন্য কোম্পানিতে জয়েন করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনি খুব বেশি একটা বেতন পাবেন না। আমাদের দেশে মূলত ফ্রেশার লেভেলের ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বেতনের কাঠামো নির্ধারিত করা থাকে। মিড এবং টপ লেভেলের ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য কোন বেতনের কাঠামো নির্ধারিত করা থাকেনা। অর্থাৎ আপনি যত বড় ইঞ্জিনিয়ার হবেন আপনার বেতন তত বেশি বাড়তেই থাকবে।
সিএসই ক্যারিয়ার
সিএসই নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কৌতূহলের অভাব নেই। বর্তমান সময় বাংলাদেশ থেকে অনেক পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গুগল, ফেসবুকের মত কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার পর থেকে আমাদের দেশে সিএসই নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। আর এই থেকেই একটি কমন প্রশ্ন সবার মাঝেই উঠে আসছে যে, বাংলাদেশে সিএসই ক্যারিয়ার কেমন!
যদি সিএসই ক্যারিয়ার এর কথা বলতে হয় তবে উপরের এত নেতিবাচক বিষয়ের পরেও ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে দিন দিন বাংলাদেশে সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের কর্মক্ষেত্র বাড়ছে। বর্তমান সময়ে ছোটোবড়ো সকল প্রতিষ্ঠানেরই অন্তত একজন করে হলেও আইটি সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। বাইরের দেশের মতই আমদের দেশের প্রতিটি সেক্টরই এখন দিন দিন আইটি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, আর এই কারণে সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ অপেক্ষা করছে।
একজন শিক্ষার্থী যদি ৪ বছরের একডেমিক পড়াশোনা ভালোভাবে শেষ করে পাশাপাশি চাহিদা রয়েছে এমন কিছু স্কিল শিখে থাকে তবে বাংলাদেশের আইটি সেক্টরে সে নিজের ভালো একটি অবস্থান করে নিতে পারবে। সরকারি এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফলাফলের সাথে সিএসই পড়াশোনা করলে এই বিষয়ে শিক্ষকতা করার জন্যেও তার বড় একটি দ্বার উন্মোচিত হয়ে যাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রাইমারি, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক লেভেলে আইসিটি কে গুরুত্ব দেয়ায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজেও সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের শিক্ষকতা করার সুযোগ অনেক বেশি পরিমাণে বাড়ছে।
একজন সিএসই পড়ুয়া যদি ৪ বছর ভালোভাবে পড়াশোনার পাশাপাশি তার স্কিলগুলো শক্তপোক্ত করে তাহলে দেশের প্রাইভেট চাকরির সেক্টরেও সে অনেক মোটা বেতনে কাজ করতে পারবে। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বিদেশি কোম্পানির শাখা অফিস থাকার কারণে, এসব অফিসে ফ্রেশ সিএসই ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জয়েন করলেও শুরু থেকে অনেক মোটা বেতন পাওয়া যায়।
পাশাপাশি বাংলাদেশে সরকারি চাকরির বাজারেও সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বছরে প্রায় হাজারের বেশি সিএসই গ্র্যাজুয়েট নিয়োগ হয়ে থাকে বিভিন্ন রকম পোস্টে।
অনেকে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করেন। যারা এমন চিন্তা করে থাকেন তাদের জন্য ভালো সাবজেক্ট হতে পারে সিএসই। কেননা সিএসই থেকেই বিদেশে খুব সহজে স্কলারশিপ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের নামি বেনামি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে সিএসই থেকে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনার জন্য যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকে গুগল, ফেসবুক এবং অ্যাপেলের মতন প্রতিষ্ঠানে চাকরিও পাচ্ছেন।
সিএসই’তে পড়ে বেকার থাকে কেন
সিএসই পড়ে ফ্রিল্যান্সিং, প্রাইভেট চাকরি, সরকারি চাকরি এমনকি বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ থাকলেও সবাই বেকার থাকে কেন, এই প্রশ্নটা অনেকেরই! সিএসইর মত ট্রেন্ডিং একটা সাবজেক্ট যেখানে এত সুযোগ তবুও দেখা যায় প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী সিএসই’তে পড়ে বেকার থাকে!
আমাদের দেশের ৩য় কিংবা শেষ বর্ষের সিএসই শিক্ষার্থীদের মোটিভেশন হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং! তারা ভাবে তারা আর কিছু করতে না পারলেও ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবে। অনেক সিএসই পড়ুয়ারা বলেই বেড়ায় আমি যদি চাকরি না পাই তখন আমি ফ্রিল্যান্সিং করব। পড়াশোনা করার পর আর কিছু না পাড়লেও ফ্রিল্যান্সিং করব এই ট্রেন্ডটি তৈরি হয়েছে আমাদের দেশের ট্রেনিং সেন্টারগুলো বাজে মার্কেটিং এর কারণে!
এই সমস্যাটা এত বেশি প্রকট হয়েছে যে চাকরি করতে না পারলে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়। তবে ফ্রিল্যান্সিং করতেও যে প্রফেশনাল স্কিল দরকার এই বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মাথায় থাকে না। সবাই ভাবে যে আর কিছু করতে না পাড়লেও দিন শেষে ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে। ইউটিউবে এখন এমন ভিডিও অহরহ খুঁজে পাওয়া যায় ক্লাস ৮ এর অমুক ছেলে ফ্রিল্যান্সিং করে এত টাকা এত কিছু আয় করেছে! আর এই বিষয়গুলো মার্কেটিং এর জন্য ব্যবহার করে আমাদের দেশের ট্রেনিং সেন্টারগুলো ফ্রিল্যান্সিং করাকে মুড়ির মোয়া বানিয়ে ফেলেছে। সবাই ভাবে দিন শেষে ট্রেনিং সেন্টারকে টাকা দিলেই হয়ত আর কিছু না হলে ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে!
একজন নতুন ভর্তিচ্ছু যখন সিনিয়র ভাইকে সিএসইতে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ চায়, তখন সেই ৩য় কিংবা ৪র্থ বর্ষের বড়ভাইরা ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবা লাখ লাখ টাকা… এই লোভ দেখিয়ে নতুনদের ভর্তি হতে উৎসাহিত করে, যেখানে তারাই তেমন কিছু করেনা।
সিএসই তে ০ এবং ১ নিয়েই সব খেলা। আপনি হয় এখানে ০ থাকবেন না হয় আপনি ১০০ হয়ে যাবেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে কম্পিউটার সাইন্সে ভালো করলে হয় আপনি খুব ভালো করবেন,না হয় আপনি কিছুই করবেন না! কম্পিউটার সাইন্সে সবকিছুই প্রোগ্রামিং নির্ভর! যদি আপনি নেটওয়ার্কিং সেক্টরে যান, তবে সেটি ভিন্ন বিষয়, এমনকি সেখানেও প্রোগ্রামিং রয়েছে। যারা ভাবেন প্রোগ্রামিং ছাড়াও সিএসই চলে তারাই সিএসইর বিভিন্ন সেক্টরে গিয়ে আটকে যান।
যারা ফ্রিল্যান্সিং করবেন বলে মনস্থির করে থাকেন, তারাও পড়ে গিয়ে অনেকটা ব্যর্থ হন, কেননা ফ্রিল্যান্সিং করেও ভালো টাকা আয় করতে মোটামোটি কোন একটি ট্রেন্ডিং প্রোগ্রামিং ভাষায় খুব ভালো একটি দক্ষতা থাকতে হয়। কিন্তু সিএসইতে পড়া অবস্থায় ৪ বছর হেলাফেলা করার কারণে তারা ভালো কোন ফ্রিল্যান্সিং পেশাতেও যেতে পারেননা। আর এই কারণেই সিএসই বিষয়টির আসল মর্মার্থ না বুঝে অনেক বেশি পরিমাণে শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে ভর্তি হবার কারণে, সিএসই’তে পড়েও অনেক শিক্ষার্থী বেকার থাকে।
সিএসই শিক্ষার্থীদের পতনের কারণ
প্রতি বছর গাদায় গাদায় সিএসই গ্র্যাজুয়েট বের হলেও দেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি সেইভাবে এগোয়নি। সিএসই সেক্টরে বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এই ভঙ্গুর দশার জন্য দায়ী বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি সম্পর্কে মনোভাব।
- ১ম বর্ষে ভর্তি হয়েই সবাই একটি ভুল মোটিভেশন সম্পর্কে জানে যে, সিএসই তে স্কিলই সব। স্কিল অর্জন করেই আমি আইটি ইন্ডাস্ট্রি কাপিয়ে দিব। আর এই মনোভাব থেকে সিএসই শিক্ষার্থীদের ক্লাসত্যাগি একটি মনোভাব চলে আসে।
- শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু থেকেই যেখানে প্রোগ্রামিং করবার কথা, তার বদলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলস্য চলে আসে, একাডেমিক পড়াশোনা থেকে অনেক বেশি দূরে সরে যায় এবং নিজে নিজে সব করবে মনোভাব চলে আসে।
- কোনরকম ১ম সেমিস্টার পার হলে শিক্ষার্থীরা আস্তে ধীরে সি প্রোগ্রাম শুরু করে, অনেকে হ্যাকারর্যাঙ্ক এর মত প্লাটফর্মে টুকটাক সহজ কিছু প্রোগ্রাম সলভ করে নিজেকে অনেক বড় প্রোগ্রামার মনে করে।
- টুকটাক সি প্রোগ্রামিং এর বেসিক শেখার-পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং করার ঝোঁক উঠে পরে। তারা ভাবতে শুরু করে ফ্রিল্যান্সিং করে লাখ লাখ টাকা আয় করার এখনই সুযোগ। এই ভুল ভাবনা থেকে তারা একাডেমিক পড়াশোনাকে দূরে রেখে ফ্রিল্যান্সিং এর পেছনে ছোটে।
- ফ্রিল্যান্সিং এর পেছনে ছুটে বেশিরভাগই দেখা যায় সেইভাবে সফল হতে পারেনা। দিনশেষে দেখা যায় ৩য় এবং শেষ বর্ষের কঠিন কঠিন পড়াশোনা সামনে চলে এসেছে। এমন সময় তাদের নিজেদের মধ্যে হতাশা কাজ করে তারা আদৌ আইটি সেক্টরে কিছু করতে পারবে কিনা ভেবে।
- হতাশা শুরু হলে সবাই বিসিএস এবং ব্যাংক জবের প্রিপারেশন শুরু করে। আর বিসিএস এর প্রিপারেশন নেয়ার সময় অনেক ভাবে এর চাইতে তো প্রোগ্রামিং ভাষা শেখাই সহজ ছিল। এতে করে দিনশেষে অন্যান্য চাকরির প্রিপারেশনও তাদের পক্ষে ভালো করে নেয়া সম্ভব হয়না।
আর এগুলোই মূলত বাংলাদেশে বেশিরভাগ সিএসই শিক্ষার্থীদের পতনের কারণ! এগুলোও আমাদের দেশে সিএসই’তে পড়ে বেকার থাকার কারণ।
সিএসই পড়েও আপনি যা যা করতে পারবেন না!
সবাই ভাবি সিএসই তে পড়লেই হয়ত আমি কম্পিউটার বা আইটি জগতের সবকিছু করতে পারব! কিন্তু এই ধারনাটা অনেক ভুল। এই সেকশনে আমরা আলোচনা করব, সিএসই তে পড়েও আপনি যে বিষয়গুলো করতে পারবেন না! আপনি এই বিষয়গুলো না পারলেও একজন সিএসই গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সবাই আপনার থেকে এই বিষয়গুলো আশা করবে।
আপনি ফেসবুক হ্যাকার হতে পারবেন না
আপনি যদি একজন কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং তথা সিএসই পড়ুয়া হয়ে থাকেন, তবে কমবেশি একটা প্রশ্নের সম্মুখীন নিশ্চিত হয়েছেন, সেটা হচ্ছে আপনি ফেসবুক হ্যাক করতে পারেন কিনা! মজার ব্যাপার হলেও সত্য, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একজন সিএসই গ্র্যাজুয়েট বা পড়ুয়াকে সবাই মজার ছলে বা না জেনেই এই কথাটি বলে ফেলে সে ফেসবুক হ্যাক করতে পারে কিনা! তাছাড়াও সিএসই পড়ুয়া হিসেবে আপনি সবার থেকে ফেসবুক আইডি ঠিক করে দেয়ার ব্যাপারে কমন একটি আকুতি পাবেন। আপনি যদি ফেসবুক আইডি জনিত সমস্যা, যেমন আইডির সিকিউরিটি, আইডি ডিজেবল ইত্যাদি সমস্যা কাউকে সমাধান দিতে পারেন, তবে সে ভাববে আপনি পারেন তবে তাকে করে দিবেন না!
সুতরাং নতুন কেউ যদি সিএসই তে ভর্তি হতে চান, তবে অবশ্যই মাথায় রাখবেন যে আপনি কখনই সিএসইর ৪ বছর পড়াশোনা করে একজন ফেসবুক হ্যাকার বা ফেসবুক এক্সপার্ট হতে পারবেননা। আপনার স্বপ্ন যদি ফেসবুক হ্যাকার হওয়ার থাকে তবে আপনার সিএসই না পড়লেও সমস্যা নেই।
অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ সেটআপ নাও পাড়তে পারেন
অনেকেরই বহুদিনের কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থাকলেও কেউ কম্পিউটারের জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ সেটআপ করতে পারেন, আবার কেউ করতে পারেননা। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে সিএসইর ৪ বছরের অনার্স কোর্সের সিলেবাসে আপনি কোথাও কম্পিউটারে উইন্ডোজ কিভাবে দেয় সেই কোর্সটি পাবেননা। যদিও সিএসইর ৪ বছরের সিলেবাসে হার্ডওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেমের মতন কিছু কোর্স রয়েছে, তবে কোথাও উইন্ডোজ কিভাবে দেয় এই কোর্সটি নেই।
সুতরাং আপনি নতুন হিসেবে সিএসইতে পরলে অবশ্যই উইন্ডোজ কিভাবে দেয় সেটা নিজে থেকে শিখে নিতে হবে। সিএসইতে কিভাবে উইন্ডোজ দেয় সেটা আপনাকে শেখানো হবেনা। আর ঠিক এভাবেই আপনি সিএসই তে পড়লেও উইন্ডোজ সেটআপ নাও পাড়তে পারেন। অনেকে আছেন যারা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং জগতে দক্ষতার সাথে কাজ করলেও তারা ঠিকভাবে উইন্ডোজ সেটআপ দিতে পারেননা।
একজন সিএসই পড়ুয়া বা গ্র্যাজুয়েট হিসেবে যখন কেউ তাদের পিসি নিয়ে আপনার কাছে উইন্ডোজ সেটআপ দিতে নিয়ে আসবে, তখন যদি আপনি না পারেন তখন তা আপনার জন্য অনেক লজ্জার বিষয় হবে। আবার যদি উইন্ডোজ সেটআপ দেয়ার সময় কোন ভুলের কারণে হার্ডডিস্কের সবকিছু ডিলিট হয়ে যায়, তখন নিঃসন্দেহে আপনার গুষ্টি উদ্ধার করা হবে। যদিও উইন্ডোজ সেটআপ দিতে না পারা একটি কমন ব্যাপার সেটা কেউ বুঝতেই চাইবে না।
এখানে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা গান লোড করা হয়
সিএসই পড়েও আপনি কম্পিউটারে গান ডাউন-লোড নাও পারতে পারেন। আপনি যদি গান, সিনেমা খুব ভালোভাবে ডাউন-লোড করতে পারেনও তাহলেও কিন্তু এটি আপনার মূল দায়িত্ব নয়! তবে আপনি যখন সিএসইর ছাত্র হবেন তখন গান-সিনেমা ডাউন-লোড করে দেয়া, পিসিতে উইন্ডোজ দিয়ে দেয়া, মেমোরি কার্ড রিকোভার করে দেয়া, মেমোরি কার্ডের হারানো ফাইল ফিরিয়ে দেয়া ইত্যাদি নানা রিকুয়েস্ট আসবে। আপনি কিন্তু সিএসইতে পড়েও মেমোরি কার্ড রিকোভার শিখতে পারবেন না।
সিএসইতে পড়লেও আপনি কম্পিউটারের মেকানিক হতে পারবেন না
অনেক সময় কম্পিউটারের মাদারবোর্ডের সমস্যা হয়, নো সিগনালের সমস্যা হয়, পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সমস্যা হয়। এতে করে দেখা যায় তখন কম্পিউটারটি চলে না। আর এরকম সমস্যা নিয়ে কেউ আপনার কাছে আসতেই পারে। তবে সিএসই এর শিক্ষার্থী হলেও যে আপনি এগুলো পারবেন এমন কিন্তু না! সিএসই তে হার্ডওয়্যারের কোর্স থাকলেও আপনি কখনই ৪ বছর শুধু সিএসই পরে একজন কম্পিউটার মেকানিক হতে পারবেন না।
সিএসই তে পড়লেই আপনি হার্ডওয়্যার বা মোবাইলের প্রাইসিং এর এক্সপার্ট হয়ে যাবেন না
একজন সিএসই পড়ুয়া কিংবা সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের অন্যতম আরেকটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় , এই দামে কোন ফোন ভালো বা এই দামে কোন ডিভাইস ভালো! মজার বিষয় সিএসই তে পড়ে আপনি কখনই প্রাইসিং এক্সপার্ট হতে পারবেননা। সিএসইর সিলেবাসে কোথাও কোন দামে কোন সিলেবাসটি ভালো এরকম কোন পড়াশোনা নেই। তবে আপনি কম্পিউটার সাইন্সে পড়লে আশেপাশের মানুষদের থেকে একবার হলেও এই প্রশ্নের সম্মুখীন হবে যে, কোন দামে কোন ফোন কিনলে ভালো হবে! কোন ফোনটি বাজারে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি!
সিএসই তে পড়লেই আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট হয়ে যাবেননা
কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং তথা সিএসই তে পড়াশোনার সময় শিক্ষার্থীদের সামগ্রিকভাবে সকল বেসিক বা ফান্ডামেন্টাল বিষয় নিয়ে ধারনা দেয়া হয়। এখানে কোন এক বিষয়ে খুব বেশি জোড় দিয়ে সেটাতে এক্সপার্ট করানো হয়না। একইভাবে আপনি যদি ভেবে থাকেন সিএসইতে পড়েই আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এ বস হয়ে যাবেন, তবে আপনি বোকার সর্গে বাস করছেন। একইভাবে আপনি সিএসইতে পড়ুয়া হয়ে থাকলে দেখবেন, কেউ একজন ফেসবুকে এড দিবে সে ঠিকি আপনাকে খুঁজে বের করেছে, খুঁজে বের করে আপনাকে ফেসবুকে এড দেয়ার ব্যাপারে হেল্প চাইবে। তবে সিএসইতে বর্তমান ডিজিটাল মার্কেটিং এর তেমন কিছু শেখানো হয়না।
সিএসই তে পড়লেই আপনি ওয়াইফাই স্পিড ঠিক করতে পারবেননা
সিএসই পড়ুয়াদের সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, সেটা হচ্ছে ভাই ওয়াইফাই স্লো স্পিড বাড়াতে পারবেন? কিংবা ভাই ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড হ্যাক করে দিতে পারবেন? তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে একজন ব্যাক্তি কখনই সিএসই পড়ে ওয়াইফাই এর স্পিড বাড়ানো কিংবা ওয়াইফাই হ্যাক শিখতে পারবে না।
একজন শিক্ষার্থী যে কম্পিউটার সাইন্স তথা সিএসইতে পড়াশোনা করছে, সে বাস্তবিক অর্থে কখনই সামাজিক মাধ্যমে তত বেশি সময় দিতে পারে না। সিএসই শিক্ষার্থীদের তাদের পড়াশোনায় ভালো করতে নিয়মিত অনেক বেশি সময় পড়াশোনার পেছনে তো দিতে হয়ই পাশাপাশি কম্পে-টিটিভ প্রোগ্রামিং এরও একটা চাপ রয়েছে। সব মিলিয়ে একজন নিয়মিত সিএসই স্টুডেন্ট কখনই অতিরিক্ত বেশি কিছুতে সময় দিতে পারেনা। সে তার অতিরিক্ত সময় দিলেও সেটা তার নিজের স্কিল উন্নয়নের পেছনে দেয়, এর বাইরে দেয়ার মত কোন সময়ই একজন সিএসই শিক্ষার্থীর কাছে থাকেনা।
সিএসই কাদের পড়া উচিত
সিএসই কাদের পড়া উচিত এই প্রশ্নের এক কথায় উত্তর দিতে গেলে, এইচএসসি লেভেলে যদি আপনার লজিক গেটের বিষয়াদি, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কিংবা ডাটাবেজের বিষয়গুলি ভালো লেগে থাকে! আপনি যদি মনে করেন এসব পড়াশোনা আপনি করতে পারবেন, তাহলেই আপনার সিএসই পড়া উচিত। আবার আপনার ম্যাথ বা ফিজিক্স একদমই ভালো লাগেনা, সেক্ষেত্রেও সিএসইতে আসা আপনার জন্য মোটেও সুবিধার হবেনা।
সিএসই পড়তে গেলে একজন শিক্ষার্থীর গনিতে দক্ষতা, লজিকাল অপারেশন এবং ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কে অনেক বেশি ঘাটাঘাটি করতে হবে। তাই যাদের সেই রকম দক্ষতা নেই বা দক্ষতা অর্জন করে নেয়ার মন মানসিকতা ও ধৈর্য নেই, তাদের সিএসই বিষয়টি থেকে দূরে থাকা উচিত। আপনি যদি লজিক বা বোঝেন বা প্রবলেম সলভিং এর বিষয়টি যদি আপনার মধ্যে না থাকে তবে সিএসই আপনার জন্য খুবি কঠিন হবে।
রিয়েল লাইভ প্রবলেমকে কত সহজ এবং সুন্দরভাবে আপনি কোডিং এর মাধ্যমে সলভ করবেন এটিই সিএসইর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। স্কুল কলেজ লেভেলে যদি ম্যাথ আপনার কাছে বাজে বিষয় হয়, আপনি যদি না বুঝে ম্যাথ মুখস্থ করেন, ম্যাথ করতে আপনার যদি বিরক্তি কাজ করে তাহলে সিএসই কিংবা আইটি রিলেটেড যেকোনো বিষয় পড়া আপনার জন্য অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে।
আপনার মধ্যে চ্যালেঞ্জ নেয়ার প্রেশার থাকতে হবে। সিএসই কিংবা আইটি রিলেটেড পেশায় আপনাকে প্রতিদিন নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ নেয়া লাগতে পারে। আপনাকে রেগুলার নানা সমস্যা মাথায় নিয়ে সেই সমস্যা সমাধান করার মন-মানসিকতা রাখতে হবে। আপনি যদি এমন মানুষ হন, যেকিনা অনেক বেশি স্ট্রেস হ্যান্ডেল করতে পারেন না; তাদের ক্ষেত্রে সিএসই’তে না আসাই ভালো হবে।
ফোকাস বা মনোযোগের দিক দিয়েও যদি আপনি দুর্বল হন , তাহলেও সিএসই আপনার জন্য না। অনেকে আছে যারা কোন একটি বিষয় নিয়ে অনেক বেশি মনোযোগ দিতে পারেননা। অনেকে ধৈর্যের সাথে কোন একটি বিষয় নিয়ে অনেকক্ষণ কাজ করতে পারেননা। তারা খুব দ্রুত ফোকাস হারিয়ে অন্যকিছু চিন্তা করতে থাকে। অনেকে কারো কথা বেশিক্ষণ শুনতে পারেনা, খুব দ্রুতই সে ধৈর্য হারা হয়ে যায়। আপনার স্বভাবও যদি এসবের সাথে কিছুটা মিল থাকে তাহলেও সিএসই আপনার জন্য খুবই কষ্টকর হবে।
You're reading eProjonmo, the versatile technology news portal of bd.